শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আন্তর্জাতিক গণ-আদালত
প্রকাশ: ০৯:০৯ am ২৩-০৯-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:১৩ am ২৩-০৯-২০১৭
 
 
 


রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে। পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের সাত সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এই রায় ঘোষণা করেন। সহিংসতার শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০০ জনের সাক্ষ্য এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান বিচারক ড্যানিয়েল ফেইয়ারস্টেইনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বেঞ্চ এ রায় দেন। রোমভিত্তিক প্রতিকী এই আদালতের নাম পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি)। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ব্যাপক হারে যুদ্ধাপরাধ করে। তখন ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য যে ধারণা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষাপটেই পিপিটি প্রতিষ্ঠিত। এ আদালত মূলত যুদ্ধাপরাধের শিকার মানুষের ভাষ্য তুলে ধরে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে আর্জেন্টাইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারক দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন রায় পড়ে শোনান। আর্জেন্টাইন বিচারক ড্যানিয়েল বলেন, মিয়ানমার সরকার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে করা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে থাকা কাচিন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অপরাধে সে দেশের সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এই প্রতীকী বিচারের রায় মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা কারও নেই। তবুও বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত আইনবিদ, অধিকারকর্মী ও গবেষকরা এই গণ আদালতে মিলিত হয়েছিলেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমনাভিযান বন্ধের দাবি নিয়ে। পিপলস ট্রাইব্যুনালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও এই শুনানিতে বিবৃতি দেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তিনি কুয়ালালামপুরে তুলে ধরেন। রায়ের পাশাপাশি পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল ১৭টি সুপারিশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার কয়েকটি সুপারিশ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার অনুসন্ধানের জন্য জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দলকে অবশ্যই সে দেশে ভিসা এবং সহজে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার করতে হবে। তাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে হবে। সুপারিশের পাশাপাশি প্রস্তাবনায় বলা হয়, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই দেশটির সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে সব পক্ষপাতমূলক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মতো যেসব দেশ পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের আর্থিক সাহায্য দিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। গণআদালতের বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশ যেমন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াকে অবশ্যই আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য, বিচার এবং সুপারিশ অবশ্যই আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে জানানো হবে যাতে সেগুলো মেনে চলার জন্য তারা মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে পারে। রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও মালয়েশিয়ার বুদ্ধিজীবী চন্দ্র মোজাফফর অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই রায় মিয়ানমার সরকারের অপরাধ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুসন্ধান এবং বিচারকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে আসিয়ান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ১৯৭৯ সালে ইতালিতে ৬৬ আন্তর্জাতিক সদস্য নিয়ে দ্য পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানবাধিকার এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত অনেক মামলা নিয়ে ৪৩টি অধিবেশন হয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে। পিপিটি ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমিতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের ধারণায় প্রতিষ্ঠিত। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এদিকে মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণে নড়েচড়ে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। তাদের পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানানোসহ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এ সেনা অভিযান বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মিয়ানমার সরকার। তথ্যসূত্র : মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইন অবলম্বনে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT