রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে 'শিবির আটক' অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে তিন ঘন্টাব্যাপী অভিযান চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে বেধড়ক পেটানোর পর ভোর ৪টার দিকে পুলিশ ডেকে আহত অবস্থায় তাদেরকে সোপর্দ করা হয়।
আটকরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
আটকরা হলেন- নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল হাসান নাফিস, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের মাস্টার্সের আরিফুল ইসলাম, আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের রাকিব আহমেদ, বোটানি চতুর্থ বর্ষের মাহমুদুল হাসান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের জাকির হোসেন, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাহেব রানা, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রাকিব, পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শাহানুর আলম হিমেল, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শরিফুল ইসলাম, আরবি সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের নাবিউল ইসলাম, অলিউল ইসলাম ও একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন 'জিহাদী বই', শিবিরের নথি, দু’টি কম্পিউটারসহ নগদ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তবে এসময় সেখানে হল প্রাধ্যক্ষ বা কোনো আবাসিক শিক্ষককে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার সময় পাশাপাশি অবস্থিত অন্য আরও তিনটি হলে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
হল সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে ২০/২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলের ১৪৩ নম্বর কক্ষে যান। ওই রুমের আবাসিক ছাত্র সাহেব রানা ও নাবিউল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হলের ১৪৮, ১৫৫, ১৫০, ২৪৯, ২৫৪, ২৭৬, ৩৫৮, ৩৬০ ও ৩৬২ নম্বর কক্ষে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন 'জিহাদী বই', শিবিরের রিপোর্ট বই, ডায়েরি, অর্থ বিভাগের ১৯ হাজার টাকা ও শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর নামের তালিকাসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট উদ্ধার করা হয়।
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘গোয়েন্দা ও প্রশাসনের কাছ থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১১ জন শিবির কর্মী ও আরেক জনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে পুলিশে দিয়েছি। সিলেটে ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর হামলার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য এ অভিযান চালানো হয়েছে।’
নগরীর মতিহার থানার ওসি (তদন্ত) মাহবুব হোসেন বলেন, ‘হল প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ১২ জনকে চিহ্নিত করে আমাদের কাছে দিয়েছে। তাদের অধিকাংশ শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’