সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় বহাল রয়েছে। এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আজ সোমবার খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলো আপিল খারিজ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় দেন। আজ সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে এজলাসে আসেন বেঞ্চের বিচারপতিরা। সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এর ফলে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে না। আগের মতোই বিচার বিভাগই বিষয়টি দেখবে।
রায় ঘোষণার সময় এজলাসে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যামিকাস কিউরি (আইনি সহায়তাকারী) এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, এ জে মোহাম্মদ আলী।
ষোড়শ সংশোধনী সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আপিলের ওপর ১১ তম দিনে গত ১ জুন শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর আজ এ রায় দেওয়া হলো।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর চলতি বছরের ৮ মে শুনানি শুরু হয়, যা ১ জুন শেষ হয়।
এর আগে গত ৭ মার্চ আপিল বিভাগ শুনানিতে জ্যেষ্ঠ ১২ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন, যাঁদের মধ্যে ১০ জন আদালতে মতামত উপস্থাপন করেন। এঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভুইয়া, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ এফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও এম আই ফারুকী ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দেন। অপর অ্যামিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসি সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর দুজন মত উপস্থাপন করেননি।