মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
সব ধরনের মসলার দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক
প্রকাশ: ১০:৫৩ am ২৯-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:৫৫ am ২৯-০৭-২০১৭
 
 
 


বিগত কয়েক মাস চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হলেও সবজিসহ কিছু পণ্যের দাম সহনীয় ছিল। কিন্তু এখন চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব ধরনের সবজি, তেল, ডাল, আদা ও রসুন থেকে শুরু করে সব ধরনের মসলার দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক। তাছাড়া মাছ-মাংসের দামও চড়া। সব মিলিয়ে বাজারে গিয়ে কোনো স্বস্তি নেই ক্রেতার মনে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাকাল মানুষ। এ সপ্তাহে সবজিসহ সব ধরনের আমদানিকৃত পণ্যেরই দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ বৃষ্টি। বিগত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং দেশের কয়েকটি এলাকার বন্যা ভোগ্যপণ্যের বাজারকে বেসামাল করে তুলেছে। সেই সঙ্গে আছে কোনো সঙ্কট দেখা দিলেই তার অজুহাতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি মুনাফা লাভের কৌশল। সঙ্কটের অজুহাতে ব্যবসায়ীরাও অতিরিক্ত দাম হাঁকান পণ্যের। গত সপ্তাহের শুক্রবার রাজধানীর বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ৮০ টাকা দরে। কিন্তু গতকাল পণ্যটি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। এছাড়া সব সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। বাজারে সবজি, মাছসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার জন্য অব্যাহত বৃষ্টিকেই দায়ী করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, সারাদেশে বৃষ্টির কারণে সবজির উত্পাদন পর্যায়ের কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের উত্পাদনে। তবে ভোক্তারা বলছেন, ষড়ঋতুর এই দেশে রোদ-বৃষ্টি-শীত এসব থাকবেই। এগুলোকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কোনো পণ্যের দাম কমানো হয় না। মূলত সিন্ডিকেট ব্যবসার জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ভোক্তা। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৪০ এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারে বেগুন কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, শিম ১২০, হাইব্রিড টমেটো ১৬০, দেশি টমেটো ১০০, শসা ৫০, কচুর লতি ৬০ থেকে ৬৫, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫, করলা ৬৫ থেকে ৭০, কাঁকরোল ৬০, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ ও কচুরমুখী ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ৪০, লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০, পালং শাক আঁটি প্রতি ২০, লালশাক ২০, পুঁইশাক ৩০ ও লাউশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে অধিকাংশ মুদি পণ্যেরই দাম বেড়েছে। গতকাল বাজারে কেজি প্রতি ছোলা ৮৫ থেকে ৯০, দেশি মুগ ডাল ১৩০, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০, মাসকলাই ১৩৫, দেশি মসুর ডাল ১২৫ ও ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ৩৬০, জিরা ৪৫০, শুকনা মরিচ ২০০, লবঙ্গ ১৫০০, এলাচ ১৬০০, চীনের আদা ১২০ টাকার বদলে ১৫০ ও কেরালা আদা ১৪০ টাকার বদলে ১৭০ ও হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গতকাল বাজারে কেজি প্রতি দেশি রসুন ২০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১২০, ভারতীয় রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ ও আলু ২৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। ভোজ্য তেলের দামও গত দুই সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে ব্র্যান্ড ভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০ থেকে ৫৪০ ও প্রতি লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দর পর্যালোচনা করে দামে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। টিসিবির মূল্যতালিকা অনুযায়ী ব্র্যান্ড ভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫১০ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার ভোজ্য তেল বিক্রি হয় ১০২ থেকে ১০৭ টাকায়। আমদানিকৃত চাল বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে গতকাল মোটা স্বর্ণা চাল ২ টাকা কমে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা ও পারিজা চাল ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৫৮, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৪, বিআর-২৮ ৪৮, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫৬, পাইজাম ৪৮, বাসমতি ৫৩, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৩, পোলাওয়ের চাল পুরনো ১০০ ও নতুন ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০ ও চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ ও প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছের রাজা ইলিশের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। প্রতি কেজিতে এ মাছের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি আকারের প্রতিটি ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ছোট দেশি মুরগি গত সপ্তাহের চেয়ে বাড়তি দামে প্রতি পিস বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা দরে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। লেয়ার মুরগি ২২০ ও পাকিস্তানি লাল মুরগি ২০ টাকা বেড়ে কেজি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গতকালের বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ ও খাসির মাংস ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সকালের খবরকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে পণ্যের যেটুকু দাম বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার কৌশলে। বৃষ্টির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের পণ্যেরই দাম বেশি নিচ্ছে ভোক্তার কাছ থেকে। আসলে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ না কাটলে ভোক্তার স্বস্তি আসবে না। তাছাড়া সরকারের কোনো সংস্থা এসব অনিয়ম দেখতে বাজারে যায় না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।’

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT