স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে ৫৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল সংস্থার ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ঋণের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সহায়ক প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হবে ৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য খাতের গুণগতমান উন্নয়ন এবং অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হবে। স্বাস্থ্য খাতে পিছিয়ে থাকা সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগকে অগ্রাধিকার ধরে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় দুই বিভাগে প্রতিবছর ১ লাখ ৪৬ হাজার নারী দক্ষ প্রজনন সেবা পাবে। টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসবে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী ৫০ লাখ শিশু। এছাড়াও বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ডিজিটালাইজেশনে নেওয়া পৃথক প্রকল্পে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। এ দুই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হবে। তা ছাড়া সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারও নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য খাত সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ৫১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রকল্পটির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার নিয়ে আসা হবে। সেই সঙ্গে মানসম্মত জরুরি স্বাস্থ্যসেবাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে থাকা সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই বিভাগে বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার মাকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর মাধ্যমে নির্ধারিত টিকাগুলো নিশ্চিত করা হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫০ লাখ শিশুকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য খাত সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার ব্যয় করবে। এতে বেশ কয়েকটি দাতা দেশ ও সংস্থা অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটির অনুদান হিসেবে এ প্রকল্পে দেড় কোটি ডলার পাবে সরকার। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ, নবজাতক ও গর্ভকালীন প্রস্তুতি সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি পুষ্টি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে ডিজিটাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কার্যক্রম উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকিতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবছর ৭০০ কোটি ডলারের কেনাকাটা করে থাকে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই কেনাকাটা হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের চলমান ই-জিপি কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করা হবে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৩০০ সরকারি প্রতিষ্ঠানে ই-জিপি চালু করা হবে। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক ও ভৌত অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে। তা ছাড়া জনগণকে সরকারি ক্রয় কাজের তদারকিতে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা হবে। বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার জাফরুল ইসলাম বলেন, ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন আনতে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ইলেকট্রনিক্স প্রকিউরমেন্ট চালু করা হয়। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারি সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এছাড়া নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, সংস্থার নমনীয় ঋণ দানের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) থেকে সহজ শর্তে ৫৭ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। ৩৮ বছরে এ ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবে সরকার। এর মধ্যে রেয়াতকাল থাকবে ৬ বছর। বিনাসুদের এ ঋণে রেয়াতকাল পরবর্তী সময়ে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে।