বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
হাই কোর্টে সাত খুনের রায় পিছিয়ে ২২ অগাস্ট
প্রকাশ: ১২:২৮ pm ১৩-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:৩৪ pm ১৩-০৮-২০১৭
 
 
 


নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় আসামিদের আপিলের রায় পিছিয়ে ২২ অগাস্ট নতুন তারিখ রেখেছে হাই কোর্ট।

রোববার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চের এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর দুই বিচারক এজলাসে এসে রায়ের নতুন তারিখ জানান।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী পরে সাংবাদিকদের বলেন,“রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তারিখ পেছানো হয়েছে।”

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরের অনুমতি (ডেথ রেফারেন্স) এবং আসামিদের আপিল শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই দুই বিচারকের হাই কোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ১৩ অগাস্ট দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল সেদিন বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ মিলে ৩৩ কার্য দিবস এই মামলার শুনানি হয়েছে।

সাত খুন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

একসঙ্গে সাতজনকে হত্যার পর লাশ ডুবিয়ে দেওয়ার ওই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়। ওই হত্যাকাণ্ডে এলিট বাহিনী র‌্যাবের কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে এলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও শিরোনাম হয়।

ওই ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। দুই মামলার তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে হত্যার এই পরিকল্পনা করেন আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে র‌্যাব সদস্যদের দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

আসামিদের মধ‌্যে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ঘটনার ১৭ মাস পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আসামিদের মধ‌্যে ২১ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত চলাকালে নূর হোসেন ভারতে থাকায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি পুলিশ। 

গ্রেপ্তার র‌্যাব সদস‌্যরা আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, তাতে হত‌্যাকাণ্ডের ভয়ঙ্কর বিবরণ উঠে আসে। তারা জানান, অপহরণের পর সাতজনকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। পরে মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় শ্বাস রোধ করে।

লাশগুলো শীতলক্ষ‌্যায় ফেলে দেওয়ার সময় ডুবে যাওয়া নিশ্চিত করতে বেঁধে দেওয়া হয় ইটের বস্তা। আর লাশ যাতে ফুলে না ওঠে সেজন‌্য চিরে ফেলা হয় লাশে পেট।

জজ আদালতের রায়

জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে এ মামলার আসামিদের বিচার শুরু করেন। একসঙ্গে দুই মামলার বিচার শেষে চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন তিনি।

রায়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নূর হোসেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন; লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি নয়জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।

পর্যবেক্ষণ

এ মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য ছিলেন। ভবিষ্যতে যাতে উচ্চাভিলাসী কেউ র‌্যাবে যুক্ত হয়ে ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত হতে না পারে- সেজন্য নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্তক থাকার পরার্মশ দেওয়া হয় জজ আদালতের রায়ে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর- নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আসামি নূর হোসেনের দ্বন্দ্বের জেরেই ২০১৪ সালে ওই ঘটনায় ছয়জন ‘নিরীহ’ মানুষ খুন হয়। ‘টার্গেট’ শুধু নজরুল হলেও প্রাণ গেছে আরও ছয়জনের।

“এটি একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর কিছু সংখ্যক দুস্কৃতকারী ও কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত ঘটনা। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গডফাদার। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।

 “একজন প্যানেল মেয়র নজরুলকে হত্যা করতে গিয়ে নিরীহ ছয়জন মানুষ এই সকল র‌্যাব ও নূর হোসেন বাহিনীর দ্বারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।”

সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জনের জন‌্য রায়ের পর্যবেক্ষণে র‌্যাবের প্রশংসা করেন বিচারক। সেই সঙ্গে তিরস্কার করে রায়ে বলেন, কতিপয় হীনমনস্ক উচ্চাভিলাসী কর্মকর্তা তাদের স্বার্থের জন‌্য এই ঘটনায় জড়িত হয়েছে।

অপরাধের ‘মাইলফলক’

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে যারা কারাগারে আছেন তারা হাই কোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এছাড়া নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স আকারে নথি আসে হাই কোর্টে।

এরপর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আলোচিত এ মামলার শুনানির জন্য গত ১৭ মে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলে ২২ মে থেকে শুনানি শুরু হয়।

রষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবদিকদের বলেছিলেন, “নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় বিচারিক আদালত যে দণ্ড দিয়েছে, যদি কোনো অজুহাতে আপিলের রায়ে কারও দণ্ড কমানো হয় তাহলে আইন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা ব্যাহত হবে।”

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচারিক আদালতের দণ্ড আপিলের রায়ে বহাল রাখার আরজি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেছিলেন, “দেশে যত অপরাধ ঘটেছে, সমস্ত অপরাধের পরিসংখ্যান যদি নেওয়া হয় তবে এই অপরাধটি অপরাধ জগতের মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হল- আমাদের রক্ষা করা, সেখানে তারাই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে বলে আদালতের রায়ে উঠে এসেছে।”

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT