জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার দুই সহযোগীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করেছেন জানিয়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কারাবিধি অনুযায়ী তাদের দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে।
এই তিনজনের মধ্যে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। আর দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন আছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে।
তবে কখন কোথায় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে- সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি মন্ত্রী।
রোববার মন্ত্রণলয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল, রাষ্ট্রপতি নামঞ্জুর করেছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে জেল কোড অনুযায়ী যা করা দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কৃপা প্রার্থনাই ছিল এই তিন জঙ্গির প্রাণ বাঁচানোর শেষ সুযোগ।
সেই সুযোগ নিতে গত ২৭ মার্চ কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন তারা।
কারাবন্দিদের ক্ষমার আবেদন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর ওই নথি ফিরে আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
তবে শনিবার পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো আদেশ বা নথি কারাগারে পৌঁছায়নি বলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রায় কার্যকর করতে অনেক ধরনের প্রক্রিয়া রযেছে, টাইম ফ্রেম রয়েছে।
জেলকোড অনুযায়ীই রায় কার্যকর করা হবে।”
তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি পাননি বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান কামাল।
সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন।
এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।
ওই ঘটনায় করা মামলার চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রাখে।
এ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।