সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করার পর মেয়রের চেয়ারে বসলেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এবার রোববারের মতো বাধাপ্রাপ্ত হননি তিনি। কক্ষেও কোনও তালা ছিল না। দরজাটা খোলাই ছিল।
হাইকোর্টের আদেশে মেয়র হিসেবে বহাল হওয়ার পর রোববার নগর ভবনে দায়িত্ব নিতে গিয়ে কক্ষে তালা দেখতে পান মেয়র বুলবুল। অনেক নাটকীয়তার পর তালা খুলে দেয়া হলেও চেয়ারে বসার আট মিনিট পরই ফের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পান।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে যান। এদিন কোনও ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়াই মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন।
এর আগে নগরীর উপশহরের বাসা থেকে অটোরিকশায় চড়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে মেয়র বুলবুল নগর ভবনে যান। এসময় বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
এর আগের দিন দায়িত্ব নিতে বুলবুল তার অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ পেলেও এ দিন অফিসের দরজা খোলাই ছিল। রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন ও সচিব মাহাবুবুর রহমান আগে থেকেই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মেয়রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মেয়র বুলবুলকে সেখানে তারা তাকে স্বাগত জানান। এর পর মেয়র নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেন।
এসময় মেয়র বুলবুল আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে মোনাজাত করেন। এর পর তিনি চেয়ারে বসে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ২০১৩ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে তিনি একলাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়েছিলেন। ওই বছরের ২১ জুলাই তিনি মেয়র হিসেবে শপথ নেন। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ১৫ জুন তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। সে অনুযায়ী তিনি আর ১৫ মাস দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
দায়িত্ব নেয়ার পর এ প্রসঙ্গে মেয়র বুলবুল বলেন, আগামী ১৫ মাসকেই পাঁচ বছর হিসেবে ধরে নিয়ে তিনি কাজ করবেন। নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অর্ধেক হলেও করতে চান এ ১৫ মাসে। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বে থাকাকালে ২০১৫ সালে ৭ মে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন।
এর পর গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
পরে গত রোববার সকালে দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গিয়ে দেখেন, তার কক্ষটি তালাবদ্ধ। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন দুপুরে নগর ভবনে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এর পর রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরীফ উদ্দীন ও সচিব মাহাবুবুর রহমান পুলিশের সহযোগিতায় মেয়রের অফিস কক্ষের দুটি তালা ভাঙেন।
পরে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দায়িত্ব নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তার চেয়ারে গিয়ে বসেন। এর তিন মিনিটের মাথায় মন্ত্রণালয় থেকে তার বরখাস্তের আদেশ ফ্যাক্সযোগে রাসিকে আসে। এ বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে রিট করেন বুলবুল। উচ্চ আদালত তার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন।