আজ রবিবার (১৩ মে) বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মায়েদের নিয়ে আছে নানা আয়োজন। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিনটি মা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।
মা দিবসের উদ্দেশ্য হলো— সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আপন নিবাসের ঠিকানা খুবই কম। মায়েদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই এই দিবস। মা দিবসের সূচনা হয় ১৯০৮ সালে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার এক স্কুলশিক্ষিকা অ্যানা জারভিস সেখানকার পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা দেখে মর্মাহত হয়ে মায়ের জন্য বিশেষ দিন পালনের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির কথা ভেবেছিলেন।
অ্যানা জারভিসের সেই ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই ১৯০৫ সালের ৯ মে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন। বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে ১৯০৮ সালে তার মা ফিলাডেলফিয়ার যে গির্জায় উপাসনা করতেন, সেখানে সব মাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা দিবসের সূচনা করেন। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মায়েদের জন্য উৎসর্গ করে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।
মাকে নিয়ে এদিনের ভাবনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও। মাকে উৎসর্গ করে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরছেন সন্তানেরা। তেমনই একজন সেঁজুতি খান। অভিনয় শিল্পী শহিদুজ্জামান সেলিম এবং রোজি সিদ্দিকী দম্পতির সন্তান তিনি। ফেসবুকে বাবা-মা’র ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘মা ছিল বলে এই আমি, এই আমরা।’
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী মায়ের ছবি পোস্ট করে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আম্মার পেট জুড়ে তখন আমি। প্রেগন্যান্সির ৮/৯ মাস চলে। সময়টা ১৯৭১ এর শেষের দিকে, নভেম্বর হবে। আব্বা ঠিক করে ফেলেছে, যুদ্ধে যাবে। আমি পেটে আসায় আম্মা আর ভাইয়াকে ফেলে যেতে পারছে না। তো মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আর ঠিক করলো যাবার আগে একটা পারিবারিক ছবি তোলা দরকার। যদি আর ফিরে না আসে সে! ছবিতে তার আসন্ন সন্তানেরও একটা উপস্থিতি রইলো। সেই সন্তান একদিন তার সাথে বাবার ছবি দেখবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আম্মা নাকি আল্লাহ্র কাছে দোয়া করে একটা মেয়ে চেয়েছিল। তার শখ-আহ্লাদ মেটাবার জন্যে। পরবর্তীতে আমাকে অবশ্য এ নিয়ে ব্যাপক খোটা শুনতে হয়েছে। তো মা দিবসে এ ছবি দিয়ে আমি আম্মাকে অনেক জ্বালিয়েছি বলে কোনও ঘুষটুষ দিচ্ছি না। আম্মা এ জগতে আর নেইও। বরং এ আমার সমস্ত পারিবারিক ছবির মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভ আর মূল্যবান মনে হয়। যুদ্ধাবস্থায় একটি সুখী তরুণ পরিবার সেজেগুজে ছবি তুলতে গেছে এই ভেবে, যদি তারা আর না বেঁচে থাকে। তখন এই ছবিটি তাদের হয়ে থেকে যাবে এই বাংলায়।’
সাংবাদিক মানসুরা হোসাইনের মেয়েরা তার জন্য কেক বানিয়েছে। সেই ছবি পোস্ট করে মানসুরা লিখেছেন, ‘মেয়েদের হাতে বানানো কেক। বড় মেয়ের হাতে বানানো মোমবাতি, মা ও মেয়ের ছবি দিয়ে ছোট মেয়ের বানানো গিফট। মা দিবসে এর চেয়ে বড় গিফট আর কিছুই হতে পারে না। আমার জানের টুকরা বাচ্চারা।’
যাদের মা নেই তারাও মাকে স্মরণ করে লিখেছেন ফেসবুক ওয়ালে। কেউ কেউ লিখেছেন ‘আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, মা, আমি চাইলেও তোমার কাছে যেতে পারি না।’