আজ রোববার শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল সোমবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আজ চাঁদের দেখা না মিললে চিরাচরিত নিয়মে ঈদ হবে পর দিন মঙ্গলবার। আজ সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে (বায়তুল মোকাররম) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। সভায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ এবং শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে। রমজানের রোজার শেষে খুশির সওগাত নিয়ে দুয়ারে এসেছে ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের চাঁদ দেখে তৃপ্তির আনন্দ নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন অবনত মস্তকে। বরাবরের মতো সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উত্সাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেছেন, চন্দ্র মাস ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারগণ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যান।’ ঈদুল ফিতর আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে উত্সব, আনন্দ, খুশি। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের অবসানে ঈদের চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব প্রতিটি মুসলমানের হূদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। এই দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উত্সব হলেও যুগ যুগ ধরে এদেশে তা সার্বজনীন উত্সবে পরিণত হয়েছে। ভেদাভেদ ভুলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ উত্সবে শামিল হন। আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগেও আরবে ‘নাইরোয’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি জনপ্রিয় বার্ষিক উত্সবের প্রচলন ছিল। হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান, এই দুটি জাতীয় উত্সবে মদিনার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নানা প্রকার স্থূল খেলায় মেতে উঠেছে। তখন মহানবী (সা.) তাদের লক্ষ্যহীন আনন্দ-উত্সবের সেই পদ্ধতির পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমণ্ডিত এবং বহুবিধ কল্যাণধর্মী ঈদুল ফিতরের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা যা ঈদুনা-অর্থাত্ প্রত্যেক জাতির বার্ষিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। ঈদের দিন হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সেই আনন্দ-উত্সবের দিন। এভাবেই হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে মুসলিম জীবনে প্রবর্তিত হল ঈদ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দেশবাসীর প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ রোববার থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হবে। ঈদের দিন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ উপলক্ষে বনানীর ঢাকাগেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপগুলোয় জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগ এবং নগরীজুড়ে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।