বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী আর নেই। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমা চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহচর ও তার বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দীন খোকন।
আলাউদ্দীন খোকন বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সকাল ১০টার পর রমা চৌধুরীর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পরে দুপুরের দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।
১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। চার ছেলে সাগর, টগর, জহর এবং দীপংকরকে নিয়ে ছিল তার সংসার।
কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে দুই ছেলেকে হারানোর পাশাপাশি নিজের সম্ভ্রমও হারান রমা চৌধুরী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ঘর-বাড়ি। তবু জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এ বীরাঙ্গনা। শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা। লিখে ফেলেন ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ সহ ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করেই চলতো তার সংসার।
কোমরের আঘাত, গলব্লাডার স্টোন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রমা চৌধুরী ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এদিকে রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চট্টগ্রামে। তার জন্য শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।