গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র পদে সাত প্রার্থী হচ্ছেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপি’র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমীন (কাস্তে), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফন্টের মো. জালাল উদ্দীন (মোমবাতি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিলঘড়ি)।
মেয়র পদে প্রার্থী সাতজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপি’র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে, এমনটাই নগরবাসীর ধারণা।
ভোট গ্রহণ শুরুর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম সকালে সিটি করপোরেশনের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এবং বিএনপি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর বশির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।
৩২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনে রয়েছে ৫৭টি সাধারণ এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। ভোটকেন্দ্রে ৪২৫টি এবং ভোটকক্ষ ২ হাজার ৭৬১টি। নির্বাচনে প্রিজাইডি অফিসার হিসেবে ৪২৫ জন, সহকারী প্রিজাইজিং অফিসার ২ হাজার ৭৬১ জন এবং পোলিং অফিসার ৫ হাজার ৫২২ জন দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৯ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), প্রায় ৬শ’ র্যাব সদস্য এবং ১২ হাজার পুলিশ-আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি অত্যন্ত ভালো। আমি মনে করি, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে। যারা ভোটার আছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলেছি, তারা নিরাপদে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট কাস্ট শেষে তারা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
সিটির ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হলো- চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাপুলিয়া মফিজ উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়, মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১, মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২, রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবীর।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৫ জুন রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি/ আটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, ইজিবাইক, নৌপথে লঞ্চ, ইঞ্জিনবোট, স্পিডবোট ইত্যাদি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২৪ জুন রাত ১২টা থেকে ২৭ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
তবে রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিপ্রাপ্ত দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষক, দেশি/বিদেশি সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট এবং কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কর্যক্রমে নিয়োজিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এ ছাড়া জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় হাইওয়েসমূহের ওপর দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালে। আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত ১৫ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। নির্বাচন নিয়ে উচ্চ আদালতের (হাইকোর্টে) স্থগিতাদেশ এবং পরে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন থেকে আবার দ্বিতীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়।