নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় গতানুগতিক ধারার পরিবর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নতুন এই ব্যবস্থাপনার ফলে নির্বাচনে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এর ফলে নির্বাচনকে ঘিরে যেসব অভিযোগ ওঠে সেগুলোও শূন্যের কোটায় নেমে আসবে, ঢালাওভাবে কারচুপির অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষতাও রক্ষা হবে।
একই সঙ্গে দূরে বসেও সংসদীয় ৩০০ আসনের তাৎক্ষণিক ভোটগ্রহণের চিত্র প্রত্যক্ষ করা যাবে। এই ব্যবস্থায় প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল ও যাচাই-বাছাই, কেন্দ্রভিত্তিক ভোটগ্রহণ, ভোট গণনা, ফলাফল সংগ্রহ ও ফল প্রকাশ, নির্বাচন কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ এসব কিছুতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়টি কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং কমিশনের অনুমোদনের পর এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রিসাইডিং অফিসার এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্বাচনী ফল কেন্দ্র থেকে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরাসরি ইসি সচিবালয় এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও তথ্য পাঠাতে পারবেন। দুটি তথ্য সমন্বয় করে ফল প্রকাশ করা হবে।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনায় ট্যাব সরবরাহ করা হবে। তিনি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন হতে পারে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি করে ট্যাব সরবরাহ হলে ৪০ হাজার ট্যাবের প্রয়োজন হবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় ইসি। কমিটি মনে করে, একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই কাজটি করা হলে নিয়োগ পদ্ধতি যেমন সহজতর হবে, তেমনি বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। একটি পোর্টালের মাধ্যমে সব প্রতিষ্ঠান থেকে সম্ভাব্য ভোট কর্মকর্তাদের আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরে সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে দলবাজদের বাদ দিয়ে নিয়োগ করা হবে নিরপেক্ষ ভোট কর্মকর্তা।
এ ছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার সুযোগ দিতে চায় ইসি। এ পদ্ধতিতে প্রার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেবে। গত বছরের জুলাইয়ে ইসির সঙ্গে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সংলাপে অনলাইনে মনোনয়ন জমার ব্যাপারে আলোচনা হয় এবং সকলেই এর পক্ষে মত দেয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আবেদন গ্রহণ, তথ্য সংগ্রহ, নির্দেশনা প্রদান, তথ্য সরবরাহ, আইডি প্রদান ও রিপোর্ট সংগ্রহ একটি পোর্টালের মাধ্যমে করা হবে। পোল মনিটরিং অ্যান্ড রিস্ক এনালাইসিস টিম গঠন করবে ইসি।
প্রিসাইডিং অফিসাররা ইসি সচিবালয়ের জন্য নির্ধারিত শর্টকোডে এসএমএস-এর মাধ্যমে কেন্দ্রের অবস্থা জানাবেন। ইসির সার্ভারে এই মেসেজগুলো সংরক্ষিত থাকবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রের ফলাফল, ভোট চলাকালীন পরিবেশ ম্যাপের প্রদর্শন করতে চায় কমিশন। এজন্য ডাটাবেজে ভোটকেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান সংযোজন প্রয়োজন বলে মনে করছে ইসির কমিটি। নির্বাচনী মামলা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইসি সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের দপ্তর সমূহের স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ইনভেন্টরি অ্যান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রণয়ন জরুরি বলেও মনে করছে কমিটি। তারা মনে করেন এতে কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী ও অস্থায়ী সম্পদসমূহের অবস্থান, মজুদ, চাহিদা প্রেরণ, বিতরণ, অকেজো ঘোষণাকরণ, বাজেট বরাদ্দ সুনিপুণভাবে করা সম্ভব হবে।