আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর হওয়া ট্যানারি কারখানাগুলোতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ট্যানারি কারখানাগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি স্থানান্তরে ব্যর্থ হওয়া কারখানাগুলোর বকেয়া জরিমানা হিসেবে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মওকুফ করা হয়েছে। তবে আদালত বলেছেন, ১৪২ ট্যানারি কারখানাকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। শ্রম সচিব স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় থাকা ট্যানারি কর্মচারী ও শ্রমিকদের পুনর্বাসনের কাজে সেটি ব্যয় করবেন।
পরিবেশের ক্ষতির কারণে জরিমানা হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন দিতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) ও জরিমানা হিসেবে ট্যানারি কারখানার বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিল। এর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আদালত বলেছেন, সাভারে যাওয়া ট্যানারিগুলোর বর্জ্য যাতে ধলেশ্বরী নদীতে না পড়ে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে ট্যানারি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে না। অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদেশে আদালত আরও বলেন, স্থানান্তরের পর হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানার মালিকেরা নিজস্ব সম্পত্তি, ভূমি বা স্থাপনায় ট্যানারি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে ব্যবহারের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগের জন্য আবেদন করতে পারবে।
আদালতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, আইনজীবী সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
৬ মার্চ হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ হাজারীবাগে থাকা চলমান সব ট্যানারি কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করতে এবং আইন অনুসারে এসব কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগসহ সেবা বিচ্ছিন্ন করতে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ৬ এপ্রিলের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়, যা ১২ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়। ৬ মার্চের আদেশ সংশোধন চেয়ে ঈদুল আজহা পর্যন্ত ওখানে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের করা আবেদনও খারিজ হয়।
হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরায় এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৬ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ সাভারে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪টি ট্যানারি কারখানার মালিকদের প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন আপিল বিভাগে যায়। গত বছরের ১৮ জুলাই আপিল বিভাগ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানো পর্যন্ত মালিকদের রোজ ১০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন। এ আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর আবেদন করে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন।
আর ক্ষতিপূরণ আদায়ের ওই নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না জানিয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ মার্চ এক আদেশে হাইকোর্ট ১৫৪ কারাখানাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন।