হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর অভিমুখে লংমার্চ করবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা এবং সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ কিংবা মন্ত্রিত্ব বাতিল, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীরা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্টের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্জুন কুমার দত্ত রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা ছয় দফা দাবি জানিয়েছিলাম। এজন্য আমাদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আমরা কোনো আপডেট পাইনি। তাই আমরা পুনরায় আমাদের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি।’
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে একই দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো- ১. হিন্দুদের ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে কটূক্তিকারী এবং নিজ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ স্থানীয় সাংসদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুক হককে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুরে মন্দির ও ঘরবাড়ি সরকারি খরচে পুনঃনির্মাণ করা এবং দ্রুত ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. নাসিরনগরের ঘটনায় উসকানিদাতা, মদদদাতা ও হামলাকারীসহ সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, নাসিরনগরের নিখোঁজ ছয় হিন্দু পরিবারের সদস্যরা যেখানেই থাকুক তাদের সসম্মানে ফিরিয়ে এনে পুর্নবাসন করা।
৪. বর্তমান সরকারের শাসনকালসহ গত ১৬ বছরে যত হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হওয়া। নতুবা তাদের দেশ ত্যাগের দায় রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে।
৫. প্রতিবেশী দেশের মতো বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
৬. অবিলম্বে স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করে তাদের সুযোগ-সুবিধা বিশ্লেষণ, সার্বিক নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, জীবনমান উন্নয়ন, দেশত্যাগ প্রতিরোধসহ জরুরি বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরের প্রায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দুবাড়িতে হামলা হয়। এর পাঁচ দিন পর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচটি ঘর ও একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।