শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করব না-প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ০৬:০০ am ২২-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১১:৫৭ am ২২-০৮-২০১৭
 
 
 


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর যা-ই সহ্য করা যায়, পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করব না। এ মন্তব্য করায় জনগণের কাছে বিচারও চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, এই হুমকি তাকে দিয়ে লাভ নেই। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট প্রকাশের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি সেখানে ধৈর্যের কথাই বলা হল। আমরা ধৈর্য ধরেছি। পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করা... সব সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করব না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মরণে গতকাল বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে অপমানজনক আজকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা। যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধে হারিয়েছি, যুদ্ধে হারিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। অনেকেই পাকিস্তানের দালালি করেছে। জনগণের আদালত বড় আদালত, জনগণের আদালতকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না-মন্তব্য করে জনগণের কাছে বিচার দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান রায় দিল দেখে কেউ ধমক দেবে, আমি জনগণের কাছে বিচার চাই। জনগণের কাছে বিচার চাই, পাকিস্তানের সঙ্গে কেন তুলনা করবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন তুলনা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কেউ অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা চালালে তার বিচার করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ সে অপচেষ্টা চালায় তাকে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সমাবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি আলহাজ নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দীন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দীন নাছিম এবং বিশিষ্ট লেখক ইমদাদুল হক মিলনও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি উচ্চ আদালত থেকে নানা ধরনের বক্তব্য, রাজনৈতিক কথাবার্তা এবং হুমকি-ধমকি। আমার মাঝেমধ্যে অবাক লাগে যাদের আমরা নিজেরাই নিয়োগ দিয়েছি, রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দিয়েছেন এবং নিয়োগ পাওয়ার পর হঠাত্ তাদের বক্তব্য শুনে এবং সংসদ সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সংসদ সদস্য যারা তাদেরকে ‘ক্রিমিনাল’ বলা হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ী আছে সেটাও বলা হচ্ছে। কেন ব্যবসা করাটা কি অপরাধ, প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ব্যবসায়ী মামলা করলে কি উচ্চ আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয় না। রায় তো দেয়, বিচার তো তারাও পায়। এভাবে সংসদকে হেয় করা এবং সংসদকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা, এটার অর্থ কী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতির রায়ে সংসদ সম্পর্কে বক্তব্য, সংসদ সদস্য সম্পর্কে বক্তব্য, এমনকি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও নিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা, এটা কোন ধরনের কথা। আমাদের সংবিধান আছে। যে সংবিধান ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি। সংবিধানের কোনো কোনো অনুচ্ছেদ যেটা মূল সংবিধানে ছিল-সেটাও ওনার পছন্দ নয়। পছন্দ হচ্ছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা ওই জিয়াউর রহমানের অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। তিনি বলেন, হাইকোর্টেরই যেখানে রায় রয়েছে যে জিয়ার ক্ষমতা অবৈধ, সেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে দিয়ে গেছেন জিয়াউর রহমান সেটাই ওনার (প্রধান বিচারপতি) পছন্দ। কিন্তু গণপরিষদ যে সংবিধানের ধারা করে দিয়েছেন সেই ধারা ওনার পছন্দ নয়। সেখানে উনি চাচ্ছেন মার্শাল ল’র সময় যেটা করে গেছে সেটা। এ প্রসঙ্গে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, জয়নাল আবেদীন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন, সম্পূর্ণ ভুয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে, মনগড়া তথ্য দিয়ে, বলতে গেলে বিএনপি সরকারের ফরমায়েশি তদন্ত রিপোর্ট তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি যে দুর্নীতি করেছিলেন সেই দুর্নীতির তদন্ত দুদক যখন করতে গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয় আর সেখানে প্রধান বিচারপতি চিঠি দিয়ে দিলেন-এই জয়নাল আবেদীনের দুর্নীতির তদন্ত করা যাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করবে, তারপর যদি সে তদন্তে দোষী হতো, তাহলে তো আদালতেই বিচার চাইতে যেত, আদালতে বিচার চাইলে না হয় উনি (প্রধান বিচারপতি) কিছু বলতে পারতেন। কিন্তু তদন্তই করা যাবে না-এই কথাটা প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি কীভাবে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মানে একজন দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া, দুর্নীতিবাজকে রক্ষা করা-এটা তো প্রধান বিচারপতির কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তো সম্পূর্ণ সংবিধানকে লঙ্ঘন করা, অবহেলা করা। আমার এখানে প্রশ্ন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) এ চিঠি লিখতে গেলেন কীভাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে এমন এমন জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল-কারও দেখা গেল সার্টিফিকেট জাল। কেউ কোনো এক কূটনৈতিক মিশনের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হলেন, তাকেও বিএনপি আমলে জজ করা হয়েছে। ঠিক এভাবে আরও বহু ঘটনা আছে। এমনকি ছাত্রদলের দুই নেতার কাঁধে ভর দিয়ে রায় পড়ে শোনাচ্ছে-এরকম জজও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোর্টের যে ‘স্যাংটিটি’ সেই ‘স্যাংটিটি’ ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের সবাইকে রক্ষার জন্যই কি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল উনি (প্রধান বিচারপতি) চাচ্ছেন। সংসদে একটা আইন করতে গেলে যেভাবে পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই শেষে আইন পাস করা হয়, জজেরা কলমের এক খোঁচায় সেটিকে বাদ করে দেন বলেও বিচারপতিদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফাস্ট রিডিং, সেকেন্ড রিডিং, তারপর থার্ড রিডিং এবং বিরোধী দলের আপত্তি আমলে নিয়ে যে আইন করা হয় তা বাতিল হয়ে গেল। তিনি বলেন, তার মানে এতগুলো সংসদ সদস্য, এতগুলো অফিসার-সবাই মিলে যেটা নিয়ে কাজ করল, তাদের যেন কোনো জ্ঞান-বুদ্ধি নেই। কেবল তাদেরই (বিচারকদের) জ্ঞান-বুদ্ধি এখানে প্রযুক্ত হল। সরকারপ্রধান বলেন, যে সংশোধনী নিয়ে এত আলোচনা সেই ষোড়শ সংশোধনী ‘সিক্সটিনথ অ্যামেন্ডমেন্ট’ সেখানেও তো আপিল বিভাগের প্রত্যেকটা জজ সাহেব সেখানে তাদের স্বাধীনভাবে মতামত কতটুকু দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আমি জানি না। সেই সুযোগটাও হয়তো প্রধান বিচারপতি তাদেরকে দেননি। যেটা রায়টা পড়লে অনেক কিছু বোঝা যায়। কারণ রায়টা আমরা পড়ছি এবং আরও কিছু বাকি আছে পড়ব এবং তারপর এ নিয়ে সংসদে অবশ্যই আমরা এটার আলোচনা করব। ভাষার ব্যবহারে ত্রুটিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে জনৈক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীর অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করারও তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ করেই অ্যাটর্নি জেনারেলকে অভদ্র ভাষায় গালমন্দের সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে বক্তব্য তিনি দিলেন (ড. কামাল হোসেন) আজকে কোর্টের অবস্থাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তারা। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সরকারের পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় কীভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, মামলার আলামত নষ্ট এবং তাদের অপারেশন শেষে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয় যেজন্য সাধারণ জনতার ওপর পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। হাওয়া ভবনের অধিপতি তারেক রহমান এবং জোট সরকারের দুই মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং লুত্ফুজ্জামান বাবর কীভাবে জঙ্গিদের দিয়ে ২১ আগস্টের হামলা পরিচালনা করেন এবং ধামাচাপা দিতে জজ মিয়া নাটকের অবতারণা করেন তার বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। আইভী রহমানকে দেখতে যাওয়া নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাটক করা এবং খালেদা জিয়ার সিএমএইচে আগমন উপলক্ষে আইভী রহমানের ছেলেমেয়েদের কয়েক ঘণ্টা হাসপাতালে আটকে রাখারও বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT