পুঁজিবাজারের প্রতি ধীরে ধীরে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। টানা পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। সে সঙ্গে কাটছে লেনদেনের খরাও। সর্বশেষ তিন কার্যদিবসেই লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পুঁজিবাজারের এই আচরণে স্বস্তি ফিরছে স্টেকহোল্ডারদের মাঝে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন করতে এবং মৌল ভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে গতকাল দেশের প্রধান পুঁঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ইনডেক্স বেড়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এটি আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৮২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইতে সূচকটি চালু হয়। তখন সূচকটির ভেঞ্চমার্ক ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। সূচকটি চালুর পর গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে গতকাল তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সকালের খবরকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়াতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আর পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বিশেষ করে সরকার বলছে, আগামী অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে, ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি বাজারে অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা যায়। এসব কারণে পুঁজিবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এটা স্বাভাবিক।’ মীর্জ্জা আজিজ বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজার যে অবস্থানে রয়েছে তা স্বাভাবিক। বাজার অতিমূল্যায়িত হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।’ বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পুঁজিবাজারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়তে শুরু করেছে। এছাড়াও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক কিছু ছিল না। ফলে বাজেটের পর থেকে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীদের। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে টানা উত্থান কিংবা পতন কোনোটাই স্বাভাবিক নয়। আগের কিছুদিন টানা দরপতনের পর গত কয়েকদিন ধরে উত্থান হচ্ছে। আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যে পুঁজিবাজারে মূল্য সংশোধন হবে। অন্যদিকে সর্বশেষ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ দিনই পুঁজিবাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বাকি এক কার্যদিবসে সূচক কমলেও তা ১ পয়েন্টেরও কম। গত ৯ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩২২ পয়েন্ট। এছাড়াও বেড়েছে আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন। সর্বশেষ তিন কার্যদিবসের প্রতিদিনই লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পুঁজিবাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এছাড়া গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এটি সাড়ে চার বছরের মধ্যে সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে গত ৪ এপ্রিল ডিএসইর প্রধান সূচক ৫ হাজার ৭৭৭ পয়েন্ট উঠেছিল। ওই দিনের পর থেকে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। তবে গত ১৮ জুনের পর থেকেই মূল্যসূচক টানা বাড়ছে। গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১২০ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়। গতকাল লেনদেন হওয়া ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৮টির, কমেছে ১১৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির দাম। গতকাল দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে গতকাল অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৮৯৮ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৬টির। অন্যদিকে দাম কমেছে ১০১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দাম।