মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার বিলে স্বাক্ষর করেছেন। ট্রাম্পের আপত্তি সত্ত্বেও কংগ্রেসে পাশ হওয়া এই বিলটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমতি দানের স্বাক্ষর করতে গিয়ে, বিলটিকে তিনি 'ত্রুটিযুক্ত বিল' বলে অভিহিত করেছেন। রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, নতুন এই বিলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে 'পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যকেন্দ্রিক যুদ্ধ' শুরুর প্ররোচনা দিচ্ছে। মেদভেদেভ বলেছেন, "এই যে বিলটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সই করলেন, এতেই স্পষ্ট হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব আসলে কতটা।" রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পুরোপুরি অপদস্থ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গত সপ্তাহে প্রায় সর্বসম্মতভাবে রাশিয়ার ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের বিল পাশ করে। এই বিল সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসন্তুষ্ট ছিলেন। এর ফলে অনেকেই মনে করছিলেন শেষ মুহূর্তে কোনো একটা অজুহাতে ট্রাম্প হয়তো তাতে স্বাক্ষর নাও করতে পারেন। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাশিয়া ওপর নিষেধাজ্ঞায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে নিজেকে আরো সমালোচিত করে তুলতে চাননি বলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এই বিলে স্বাক্ষর করেছেন বলেও অনেকেই ধারণা করছেন। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ভূমিকা এবং ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর এই নতুন অবরোধ এলো। গত মাসেই ট্রাম্প-পুতিনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। বৈঠকে উভয়ই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা বিল আবারো উত্তেজনার পারদই বাড়িয়ে দিল বলেও মনে করছে কেউ কেউ। তবে, জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার পরেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যাবে। তিনি বলছেন, "আমি আজকাল সত্যিই এই ভেবে বিস্মিত হই যে, দুনিয়ায় এমন কোনো ইস্যু কি আছে যেটি নিয়ে আপনি রাশিয়াকে অভিযুক্ত করতে পারবেন না! কিন্তু আমরা খিটখিটে শিশুর মতন নই এবং চারিদিকে যা কিছু ঘটে তার সকল কিছু দিয়েই আমরা বিরক্ত বোধ করি না। আমাদের সহযোগীদের সাথে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও, আমরা কাজ করতে উপায় খুঁজবো।" রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া আরো বলেন, "আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে খুশী করতে চাই বা ওই বিলে কী আছে এইসবের জন্য নয়। বরং আন্তর্জাতিক সমাজের কল্যাণের নিমিত্তে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র, আমরা একত্রে কাজ করবো এটা বোঝাতে যে, আমরাও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কাজ করতে পারি।" মার্কিন নির্বাচনে রুশ-হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ এনে এই অবরোধ দেয়া হলো, সেই অভিযোগ শুরু থেকেই নাকচ করে আসছে রাশিয়া। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধেও অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ওপর আরোপ করা এই নিষেধাজ্ঞাটিকে পরমাণু চুক্তির লংঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে ইরান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা