পরমাণু ইস্যুতে তেহরানের সঙ্গে সম্পাদিত ৬ জাতিগোষ্ঠীর সম্পাদিত চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে সম্পাদিত এ চুক্তিকে ‘ক্ষয়িঞ্চু ও পচনশীন’ অভিহিত করে বলেন, তিনি এ চুক্তিতে থাকবেন না। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চুক্তি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণাকে অবৈধ অভিহিত করে ইরান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি অবমাননা। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তবে ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইসরায়েল।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সের কাছে ইউরেনিয়াম প্রকল্প সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের দাবি ছিল ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারীরা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে স্থায়ী অবরোধ আরোপ করুক। এই দাবি মানতে নারাজ ইউরোপীয় ৫ দেশ। তারা ২০২৫ সালের পর ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পক্ষে। এমন বাস্তবতায় ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেন। ২০১৫ সালে এই চুক্তি হওয়ার পর ইরানের ওপর থেকে যেসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল সেগুলো পুনরায় আরোপ করা হবে বলেও হুমকিও দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে’ তার কাছে ইরানের সঙ্গে করা এ পরমাণু চুক্তি ‘লজ্জাকর’।
২০১৫ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন-জেসিপিওএ’র আওতায় ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে নির্বাচনি প্রচারণার সময়ই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি সে সময় বলেন, প্রেসিডেন্ট হলে পূর্বসূরি বারাক ওবামার করা এ চুক্তি বাতিল করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী প্রতি ৯০ দিন পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিশ্চিত করতে হয় যে, ইরান এ সমঝোতা মেনে চলছে। যদি তিনি বলেন, তেহরান সমঝোতা মানছে না তাহলে মার্কিন কংগ্রেস এ সমঝোতা বাতিল করতে বাধ্য। আগামী ১২ মে ট্রাম্প চুক্তিটি নতুন করে নবায়ন না করলে নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার কার্যকর হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের একা এই চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার নেই। মার্কিন প্রেডিডেন্টের একতরফাভাবে দেওয়া এ ঘোষণা ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থানের বিপক্ষে গেলো। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি অব্যাহত রাখার পক্ষে থাকলেও ভবিষ্যতে দেশটির ‘ব্যালাস্টিক মিসাইল প্রোগ্রাম'-এর কী হবে তা নিয়ে আলোচনায় রাজি আছে। দেশটির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বেশ কিছু ধারার মেয়াদ ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে। এরপর দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে এখনই আলোচনায় আগ্রহী দেশ তিনটি। পাশাপাশি সিরিয়া এবং ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধে ইরানের ভূমিকা নিয়েও আলোচনায় আগ্রহী পশ্চিমা দেশগুলো। অনেক মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাও চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন।
ইরান অবশ্য সম্পাদিত পরমাণু চুক্তির বিষয়ে নতুন করে আলোচনায় আগ্রহী নয়। বরং নিজেদের প্রতিরক্ষার স্বার্থে যতবেশি সম্ভব সমরাস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং জমা করে রাখতে চায় দেশটি।