আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ব্যাংক থেকে কোনো খরচ নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের (রেমিট্যান্স) পরিমাণ কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার সচিবালয়ের ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।
অনুষ্ঠানে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ইআরএফের নেতারা। অর্থমন্ত্রীও সে প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন।
রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্য। এটা যাতে বাড়ানো যায়...। এখন তারা টাকা পাঠালে আমরা চার্জ করি। প্রধানমন্ত্রী চার্জ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা এটা করব। তাদের (প্রবাসী) টাকা স্থানান্তরে যাতে কোনো টাকা না লাগে।’
তিনি বলেন, ‘নানা কারণে প্রবাসী আয় কিছুটা কমবে। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক জায়গায় বেতন-টেতন কমানো হয়েছে। বিদেশে যারা আয় করেন তারাও কিছু আয় বিদেশে রাখছেন, প্রথম দিকে সবটাই পাঠিয়ে দিতেন। এখন এটা হচ্ছে না।’
বাজেট প্রস্তুতের কাজ চলছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট ৪ লাখ ৬, ৭ বা ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে থাকবে।
পুঁজিবাজারের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজি বাজার ফটকা বাজারই ছিল, কোনো নিয়ম-নীতি ছিল না। গত তিন বছর ধরে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো, এটা ফটকা বাজার নয়। এর ফলাফলও আমরা দেখছি। সেখানে এখন বহুজাতিক কোম্পানিকে বলতে পারি, তোমার শেয়ার ছাড়ো। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আসতে বলতে পারি।’
প্রতি বছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার একটা ব্যবস্থা থাকে- ইআরএফের একজন নেতা এ বিষয়টি উত্থাপন করতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ওটা আমার বাজেটে বহুদিন ধরে নেই। ইট ইজ নাউ প্রোভাইড ইন দ্য ল। কারো যদি আনডিক্লেয়ার মানি থাকে, হি ক্যান ডিক্লেয়ার এনিটাইম পেইং নেসেসারি ফাইন ইত্যাদি ইত্যাদি। সেটাই গত ৩-৪ বছর ধরে চলছে।’
শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরিপ্রেক্ষিতে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘শিক্ষায় এনরোলমেন্ট বেড়েছে। মানটা মোটেই বাড়েনি বলা হয়। এখন মানের দিকে নজর দেওয়া আমাদের প্রয়োজন। মানের দিকে নজরের দাবিটা এখন ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকেও আসছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন। পাঠ্যপুস্তক সংস্কার হচ্ছে।’
গবেষণার জন্য এবার বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে, জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও গবেষণার প্রয়োজন আছে। গবেষণা যে প্রয়োজনীয়, এটা আমরা জানি। সেখানে খুব ভালভাবে জোর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে।’
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ের পর তা সরকারের তহবিলে জমা নিশ্চিতে তদারকি জোরদারের বিষয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘(মূসক) আদায় হয়, সব টাকা আসে না। এটা বন্ধ হয়ে যাবে খুব সত্বর। অনলাইন ছাড়াও আমার ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে যাচ্ছি। আশা করি, আমরা এটি ৫০ হাজার স্থাপনায় স্থাপন করতে পারব। এতে প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন রেকর্ড হবে। এটাকে কন্ট্রোল করার ব্যবস্থা আমার নিচ্ছি।’
রাজস্ব আয়ের ৪০ শতাংশ ভ্যাট থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
দুর্নীতি দূর ও বেশি কর আদায়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করতে পারে- ইআরএফের একজন সদস্য এ বিষয়টি উত্থাপন করলে অর্থমন্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানকে জবাব দিতে বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায়ই রিপোর্ট আসে, বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনুযায়ী কোটিপতির সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেভাবে ট্যাক্স জমা পড়ে না। দেয়ার ইজ এ মিসম্যাচ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর যদি একত্রে কাজ তবে ভালো হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ইআরএফের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।