সোমবার বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেও তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ক্ষেত্রটাতে যেন আমরা পেছনে না থাকি। এই ক্ষেত্রটায়ও যেন আমরা আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে পারি।
“এর জন্য, যা যা সহযোগিতা দরকার… আমি কথা দিচ্ছি, আমি করব।”
বাংলাদেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি সব কিছু ধারণ করে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরামর্শ দেন তিনি।
“আন্তর্জাতিকভাবেও যেন আমাদের এই শিল্পটা যেন মর্যাদা অর্জন করতে পারে; সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে চলচ্চিত্রেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও দক্ষতা অর্জনের জোর দেন সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৩১ জন শিল্পী ও কলাকুশলীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী শাবানা ও কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।
এবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন শাকিব খান ও মাহফুজ আহমেদ; সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জয়া আহসান। সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে বাপজানের বায়োস্কোপ ও অনিল বাগচীর একদিন।
দক্ষ চিত্রনাট্য রচয়িতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চলচ্চিত্র নির্মাণে স্ক্রিপ্ট রাইটার দরকার। খুব দক্ষ স্ক্রিপ্ট রাইটার আমাদের প্রয়োজন, যার অভাব আমাদের আছে।”
এজন্য সাহিত্যিক ও শিল্পীদের এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে স্ক্রিপ্টটা কতটা দক্ষতার সঙ্গে নির্মাণ করা হল, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে, সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
“একটা সিনেমা দেখার পর তার রেশটা নিয়ে যেন ঘরে ফেরা যায়।”
এজন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হলকে আধুনিক করে দিতে চাই, যেন সিনেমা হলে দর্শক ফিরে আসে।”
চলচ্চিত্রে সেন্সর ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সার্টিফিকেট ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের’ খসড়া প্রণয়নের কথাও বলেন তিনি।
“সেন্সরের নামে অনেক সময়, অনেক রকম সমস্যার সৃষ্টি করা হয়।”
চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে চলমান কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে বলেন শেখ হাসিনা।
“অনলাইনে চলচ্চিত্র মুক্তির ব্যবস্থা চালু হলে চলচ্চিত্র দর্শক ও গবেষকদের আকাঙ্ক্ষাও পূরণ হবে।”
এবারে পুরস্কারপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা আপনাদের কাজের স্বীকৃতি, যা আপনাদের ভবিষ্যৎ পথ চলায় অনুপ্রেরণা জোগাবে।”
অনুষ্ঠানে শাবানা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিলেও অসুস্থতার জন্য ফেরদৌসী রহমান আসতে না পারায় তার পুত্রবধূ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা যেন হারিয়ে না যান। সেজন্য, পুরস্কার দিয়ে অবদানটা স্মরণ করতে চাই।”
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব না খাটানোর আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
“শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার দেওয়া হয়, তখন আমি আশা করব এখানে কেউ কারও প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করবেন না। সত্যিকারের শিল্পীর যেন মূল্যায়ন হয়, সত্যিকারের কলাকুশলীর যেন মূল্যায়ন হয়।”
“আমাদের ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতার যেন অপব্যবহার না হয়; সেই অনুরোধটাই আমি করব। কেউ যেন এই ধরনের চাপ সৃষ্টি না করে,” বলেন শেখ হাসিনা।
২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দুই ছেলেকে নিয়ে শেখ হাসিনার হাত থেকে প্রয়াত স্বামীর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার নিচ্ছেন জয়া আহসান।
অস্বচ্ছল চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়মিত অনুদান দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিল্পী কলাকুশলী ট্রাস্ট ফান্ড আরও বড় আকারে করতে হবে। যেন কোনো শিল্পীকে কষ্ট পেতে না হয়; তার একটা সুব্যবস্থা আমি করে যেতে চাই।”
জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বিশ্বাস, চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ এ নীতিমালার আওতায় উপকৃত হবেন।”
২০২১ সালের মধ্যে এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
তিনি বলেন, বিএফডিসি স্কয়ার নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু হচ্ছে। এর ফলে চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ ও তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে শাবানা তার অনুভূতির কথা জানান।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেন প্রধানমন্ত্রী।