বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সেদেশের সেনা মোতায়েন হওয়ায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করে সতর্ক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সরকার। ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা মোতায়েন করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এতে করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভয়-ভীতি দেখা দিয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে নিয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর একইভাবে রাখাইন প্রদেশে সেনা মোতায়েন করেছিল মিয়ানমার সরকার। সে সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক দমন-পীড়ন ও নির্যাতন। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের শতাধিক গ্রামে আগুন দেয়। হত্যা করে হাজারের বেশি নিরীহ ব্যক্তিকে। নিখোঁজ হয় বহু রোহিঙ্গা। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করা হয়। বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয় লক্ষাধিক মানুষ। সে সময় প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়ন কিছুটা কমে আসে। তবে এখন ফের সেনা মোতায়েনে নতুন করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সীমান্তে বসবাসরতরা। কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান গতকাল বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সেদেশের সরকারকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী কোনো দেশের সীমান্তে সেনা মোতায়েন করতে হলে পার্শ্ববর্তী দেশকে অবহিত করেই করতে হয়। এজন্য আমরা আমাদের সীমান্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্ক রয়েছি। কোনোভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। টেকনাফে ২নং বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের ওপারে রাখাইনে সেনা মোতায়েনের খবরে আমরা বিচলিত নই। কারণ সেটি মিয়ানমার সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তারপরও সীমান্তের কাছাকাছি এভাবে সেনা সমাবেশ বাড়ানোর ঘটনায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তের স্থল ও জলপথসমূহে বিজিবিকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের খোয়ারবিলের মুজিব উল্লাহ, নাইচাপ্রোর আনোয়ার ইসলাম, বুচিডংয়ের মিনা আরা বেগম ও রাশিঢং গোদামপাড়া এলাকার মৌলনা মুফিজ মিয়াসহ অনেকেই মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, হঠাত্ করে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িঘরে তল্লাশি করে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুরুষদের। এ সময় নির্যাতন করে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হলেও অধিকাংশের খোঁজ নেই। বর্তমানে তারা বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছে না। গত মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে মিয়ানমারের মংডু উপজেলার রাশিঢং ইউনিয়নের গোদাম পাড়া গ্রাম থেকে চাষাবাদের কাজ করার সময় ৮ জনকে ধরে নিয়ে যায় সেদেশের সেনারা। এর মধ্যে ৬ জনকে ফেরত দিলেও ২ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। আর যে ৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে তাদের শরীরে নানা নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এভাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১১ গ্রাম থেকে দুই শতাধিক লোককে ধরে নিয়ে গেছে সেদেশের সেনাবাহিনী। কক্সবাজারের কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউনুচ আরমান বলেন, আমি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে খবর নিয়ে জেনেছি সীমান্তে পাঁচ শতাধিক সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সরকার। তাদের প্রত্যেকের হাতে ভারি অস্ত্র রয়েছে। রাখাইন রাজ্যের উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আল-ইয়াকিন’ ও ‘আরসা’র বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তবে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে আরাকানে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।