নিজ দেশ রাশিয়া তার হাতের মুঠোয়। বিশ্ব বলয়েও তিনি অপ্রতিরোধ্য। সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র- ক্ষমতা চর্চায় তিনি সিদ্ধহস্ত। তিনি হলেন ভ্লাদিমির পুতিন।
টানা চতুর্থবারের মতো বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বিশ্ববিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১৬ সালের ক্ষমতাধর ৭৪ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে বুধবার। ফোর্বসের তথ্যানুসারে, বিশ্বে বর্তমানে ৭৪০ কোটি মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে এই ৭৪ জন বিশ্ব ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।
শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায় পুতিনের পরে রয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউ ইয়র্কের ধনকুবের ট্রাম্প ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করেন আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতায় নাম লেখানোর পর থেকে রাশি রাশি বিতর্কের জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দুনিয়া কাঁপানো ট্রাম্প ফোর্বসের দৃষ্টিতে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছেন। ইউরোপ ছাড়াও পশ্চিমা দুনিয়ায় তার ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তার দ্ব্যার্থহীন অবস্থান রয়েছে। নারী হলেও দেশ পরিচালনায় তার নীতিগত স্পষ্ট অবস্থান ধরে রেখেছেন তিনি।
এ ছাড়া ক্ষমতাধরদের তালিকায় পুতিন, ট্রাম্প ও মেরকেলের পরে শীর্ষ দশে অন্য যারা রয়েছেন, তারা হলেন - চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (চতুর্থ), ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস (পঞ্চম), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশ রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ার জ্যানেট ইয়েলেন (ষষ্ঠ), মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস (সপ্তম), গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফ্যাবেটের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ (অষ্টম), ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (নবম) এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ।
ফোর্বসের তালিকায় এশিয়ায় ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে আরো যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খেচিয়াং (১২তম), সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (১৬তম), ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল-খামেনি (১৮তম), ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (২০তম), আলিবাবা গ্রুপের প্রধান জ্যাক মা (২৮তম), টয়োটো মোটরের প্রধান নির্বাহী আকিও টয়োডা (২৯তম), জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে (৩৭তম)।
প্রতি ১০ কোটি মানুষের ওপর এক ব্যক্তির প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ কতটা, তার ভিত্তিকে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়। তবে ক্ষেত্র ভেদে ব্যক্তির প্রভাব, সম্পদ, অধীনস্ত সম্পদের পরিমাণ, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থাশীল অবস্থানও বিবেচনায় নেওয়া হয়।
এবার তালিকায় নতুন ১১ মুখ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে (১৩তম), উবারের প্রধান নির্বাহী ট্রাভিস কালানিক (৬৪তম), যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স (৬৯তম), ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে (৭০তম)।
এ ছাড়া এবার তালিকায় ফিরেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান (৫৬তম) ও ১ জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে যাওয়া জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেস (৩৬তম)। গুটেরেস ২০০৯ সালে এবং এরদোয়ান ২০১১ সালে ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় ছিলেন। তুরস্কে সেনা অভুত্থান চেষ্টা মোকাবিলা করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকা এরদোয়ান ইচ্ছামতো ক্ষমতার চর্চা করে প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সিরিয়া ইস্যুতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এবারের তালিকায় ছয়জন নারী স্থান করে নিলেও তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নাম নেই। নির্বাচনে হেরে গিয়ে ক্ষমতা চর্চার সব বন্ধ হয়েছে তার।