একাত্তরে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর একে একে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, ঢাকার দুই মেয়র, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।
শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
বুধবার সকাল পৌনে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাকে সেখানে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী এরপর স্মৃতিসৌধে উপস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
সকাল ৭টার কিছুক্ষণ আগে রাষ্ট্রপতি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী তাকে সেখানে স্বাগত জানান।
এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফুল দিয়ে আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়; বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি অপেক্ষমান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। জাতীয় পাতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে।
রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে।
অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুদিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে রায়েরবাজারে যেভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল- অভিনয়ের মাধ্যমে মূলবেদীর পাশে সেই দৃশ্যের রচনা করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সদস্যরা।
সেই বর্বর হত্যার দায়ে বদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর প্রথম বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে বাংলাদেশ।