বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২০ শতাংশ হওয়া উচিত বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)। অবশ্য গত বুধবার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের মুদ্রানীতির চেয়েও কিছুটা কম।
বিল্ড বলেছে, ভালো বিনিয়োগ ও আর্থিক স্বচ্ছতার সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তা করাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেশে কেন কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ বাড়ছে না, কেন বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে না—এসব প্রশ্নের জবাব মুদ্রানীতিতে নেই। যদিও এ ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে নজর দেওয়া উচিত।
নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে বিল্ডের এক পর্যালোচনায় এসব কথা বলা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার এ পর্যালোচনাটি গণমাধ্যমে পাঠায় বিল্ড। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত তুলে ধরা হয়েছে। এ সংস্থাটি মেট্রোপলিটন চেম্বার, ঢাকা চেম্বার ও চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে গঠিত।
নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বিল্ড বলেছে, এটা ৫ শতাংশের নিচে নামানো যেত। তবে হাওরে পানিতে ডুবে ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ বেড়ে গেছে। প্রধান খাদ্য চালের দাম স্থিতিশীল না হলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে উল্লেখ করা হয় বিল্ডের পর্যালোচনায়। এতে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব, যা ৫ দশমিক ৭ শতাংশের লক্ষ্য করা আছে। এ জন্য খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ও বাসস্থানের কিছু মৌলিক সেবার মূল্য মধ্যম আয়ের মানুষের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদের ব্যবধান বা স্প্রেড কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছে বিল্ড। সংস্থাটি বলেছে, চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো যেসব দেশ উচ্চ হারে বিনিয়োগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তারা স্প্রেডের হার বেঁধে দিয়েছে ৩ শতাংশের নিচে।
বিল্ড মনে করে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে স্প্রেডের হার দেড় শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য স্প্রেডের হার তিন থেকে পৌনে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে। বর্তমানে এ হার ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের বিষয়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে কোনো নীতিগত উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করে বিল্ড বলেছে, কিছু রপ্তানিকারক মনে করেন, টাকার মান সমন্বয় এ ক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হতে পারে। কিছু দেশ এ পথে হেঁটেছে।
বিল্ডের পর্যালোচনায় নীতির ঘন ঘন পরিবর্তন ও ঘোষিত নীতির বাস্তবায়নে বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে বলা হয়, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে বিনিয়োগকারীদের সমস্যা হয়।
অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠানো রোধে মুনাফা প্রত্যাবাসন নীতির দ্রুত পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় বিল্ডের পর্যালোচনায়।