মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে রাজধানীসহ সারাদেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৪ জন নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
ঢাকা : রাজধানীর ভাষানটেক দেওয়ানপাড়া লোহার ব্রিজ এলাকায় মঙ্গলবার দিনগত রাত ৩টার দিকে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- আতাউর রহমান আতাসহ (৪৬), বাপ্পি (৩৮) ও মোস্তফা হাওলাদার ওরফে কসাই মোস্তফা (৫০)।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুর কবির জানান, গোপন খবর পেয়ে রাতে লোহার ব্রিজ এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন মাদক বিক্রেতা নিহত হন।
ঘটনাস্থল থেকে দু’টি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
সাভার (ঢাকা) : অন্যদিকে, সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল-টঙ্গি মহাসড়কের মরাগাঙ এলাকায় মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি (৩৫) নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে আব্দুল্লাপুর-বাইপাইল মহাসড়কে চলন্ত গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে একদল ডাকাত। পুলিশ গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ওই ব্যক্তি নিহত হন। বাকিরা প্রাইভেটকারে করে পালিয়ে যায়।
আশুলিয়া থানার এস আই মনিরুজ্জামান বলেন, এক দল ডাকাত মহাসড়কে ডাকাতির চেষ্টাকালে টহল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়াল বলেন, মহাসড়কে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত দলের এক সদস্য নিহত হয়েছে।
যশোর : জেলার বেনাপোলের বড়আঁচড়া এলাকায় বুধবার ভোরে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘গোলাগুলিতে’ দুজন নিহত হয়েছে।
নিহতরা হলেন- বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের মৃত শাহাজানের ছেলে লিটন (৩৪) ও অজ্ঞাত (৪০)।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, ভোরে বেনাপোল বড়আঁচড়া এলাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাজা, ১টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাউদ্দিন শিকদার জানান, স্থানীয়রা নিহত লিটনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন। সে চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তবে অপরজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
মাগুরা : শহরতলীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে তিন মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন- শহরের ভায়না চোপদার পাড়া এলাকার মহিউদ্দিন চোপদারের ছেলে বাচ্চু চোপদার (৫৫), ইসলামপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাক ঢালির ছেলে রায়হান ঢালি ব্রিটিশ (২০) এবং নতুন বাজার বৈরাগি পাড়ার খোকন অধিকারীর ছেলে কিশোর অধিকারী কালা (৪২)।
রাত ২টার দিকে সদর থানার এসআই মিরাজুল ইসলাম পুলিশের পিকআপ ভ্যানে করে লাশ তিনটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তাদের নাম অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, রাত ১টার দিকে টহল পুলিশ গোলাগুলির সংবাদ পেয়ে বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকায় গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে পড়ে থাকতে দেখে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৩২০ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি গাঁজা, ৬ বোতল ফেনসিডিল, ৬ টি রাইফেলের গুলি ও ৮ টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত রায়হান ঢালি ব্রিটিশ ও কিশোর অধিকারী কালার নামে সদর থানায় ১০টি ও বাচ্চু চোপদাররে নামে ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কুমিল্লা : জেলার বুড়িচং উপজেলার লড়িবাগ এলাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোছমত আলী (৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
নিহত ওই মাদক ব্যবসায়ী উপজেলার ছয়গ্রাম এলাকার মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করতে উপজেলার লড়িবাগ এলাকায় রাস্তার পাশে তিনি পুলিশ নিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী রোছমত ও তাদের সহযোগিরা পৌঁছলে পুলিশ তাদের আটকের চেষ্টা করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষায় ২৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোঁড়ে।
এ সময় মাদক ব্যবসায়ী রোছমত গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই অভিযানের সময় তিনজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তারা হলেন-এসআই মোয়াজ্জেম, এএসআই সহিদ ও কনস্টেবল আল আমিন। আহত পুলিশদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে।
ওসি আরও জানান, নিহত রোছমত আলী একজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে থানায় ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে।
নড়াইল: জেলায় নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের মালিবাগ এলাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সজিব (২৬) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।
নিহত সজিব নড়াইল সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের আলতাবের ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, মাদক বিক্রেতারা এলাকাতে অবস্থান করছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে মালিবাগ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে সবুজ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে ২৭৬ পিস ইয়াবা, রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি, তিনটি দা উদ্ধার করা হয়।
পরে সবুজকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সবুজের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।
কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরের কবিতা চত্বর এলাকায় মঙ্গলবার দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মজিবুর রহমান (৪২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
নিহত মজিবুর রহমান নেত্রকোনার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ১০ মামলার আসামি ছিলেন বলে জানা গেছে।
র্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এসময় ঘটনাস্থল থেকে ছয় হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, তিন রাউন্ড গুলি ও গুলির দু’টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে’ ইসহাক নামে (৩৫) এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।
নিহত ইসহাক নগরের কোতোয়ালি থানার ঝাউতলা কলোনির মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
র্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশেকুর রহমান জানান, রাতে টাইগারপাসের পলোগ্রাউন্ডে মাদক বিক্রেতাদের অবস্থানের খবর পেয়ে র্যাবের মোবাইল টিম অভিযান চালায়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে ইসহাক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এবং তার সঙ্গীরা পালিয়ে যান।
এসময় ঘটনাস্থল থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
ইসহাকের বিরুদ্ধে থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
চুয়াডাঙ্গায়: জেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তানজিল হোসেন (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত তাজজিল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দিনগত রাতে শহরতলির সাতগাড়ী এলাকার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তানজিল হোসেন জেলা শহরের দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্র মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে মাদকব্যবসায়ীরা পিছু হটলে ঘটনাস্থল থেকে তানজিলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, চার রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই রবিউল ইসলাম ও কনস্টেবল আব্দুস সবুর আহত হয়েছেন।
নিহত তানজিল জেলার একজন শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী। তার নামে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।