ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনে দেখা করতে যান প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের উপসচিব আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা পরিস্থিতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, বন্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। এ সময় রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন বন্যাকবলিত মানুষের দুর্দশা লাঘবে ত্রাণকার্যে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে নিশ্চিত করেন জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ফিরে যান। অন্যদিকে সূত্রগুলো জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রাষ্ট্রের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগেই বঙ্গভবনে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পর বঙ্গভবনে ঢোকেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সূত্র জানায়, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ওই আলোচনায় রিভিউ পিটিশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে রায়ে যেসব পর্যবেক্ষণ এসেছে সেসব বিষয়ে প্রত্যাহারের আলোচনা হয়েছে। গত ১২ আগস্ট সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেন। ১৪ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন ওবায়দুল কাদের। একই দিনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি। এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়েছে। এ রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। আওয়ামী লীগ মনে করছে, রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতি রয়েছে। রায়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য এই রায়কে যতটা সম্ভব প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়। অন্যদিকে ওই রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়েছে বলে তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এই রায়কে ঐতিহাসিক হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের গ্রেফতার দাবি করে আসছে বিএনপি। উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনী পাস করে জাতীয় সংসদ। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের নভেম্বরে ৯ জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরে সরকারপক্ষ আপিল করলে গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। ১ আগস্ট আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এখন রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেলে রিভিউ পিটিশন করতে পারে।