রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় স্বামী মো. আসিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সিফাতকে হত্যা করার বিষয়টি প্রমাণিত না হওয়ায় আত্মহত্যার প্ররোচণায় তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ সোমবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।
একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এ মামলার অন্য তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন। এরা হলেন, সিফাতের শ্বশুর হোসেন রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী ও মামলাটির প্রথম ময়নাতদন্তকারী বর্তমানে মানিকগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান।
তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেছেন।
এদিকে রায়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিফাতের বাবা-মা। তারা ন্যায় বিচার পাননি বলে জানিয়েছেন। এ জন্য তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমানের। তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছি। আমরা ব্যর্থ হইনি।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শফিউল আলম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা ন্যায় বিচার পেয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামির রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজ দিন ধার্য করেন আদালত।
২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় হোসেন রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার পুত্রবধূ ওয়াহিদা সিফাতের। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ২ এপ্রিল মহানগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার।
প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ডা. জোবাইদুর রহমান বলেন, সিফাত আত্মহত্যা করেছেন। কোনো প্রকার ভিসেরা রিপোর্ট ছাড়াই তিনি মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ২১ জুন কবর থেকে সিফাতের লাশ তুলে আবারও ময়নাতদন্ত করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক বলেন, সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে গত বছর ২২ মার্চ নওগাঁ জেলা সিআইডি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আহমেদ আলী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।