দেশের ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে নতুন করে জাতীয়করণ (সরকারি) করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ওই সব কলেজের শিক্ষকেরা শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত বিবেচিত হবেন, নাকি ‘নন-ক্যাডার’ হবেন, সেটি এখনো ঠিক করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাঁদের বদলি ও পদোন্নতি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে সেটিও ঠিক হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া তাঁরা কোনোভাবেই মানবেন না। তাঁদের নন-ক্যাডার করতে হবে। অন্যদিকে জাতীয়করণ হতে যাওয়া শিক্ষকেরা বলছেন, আগের মতোই তাঁদের ক্যাডারভুক্ত করতে হবে। এই নিয়ে দুই পক্ষই আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত না হলেও তাঁরা তিনটি বিকল্প প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে কাজ করছেন। প্রথম প্রস্তাবটি হলো, প্রচলিত নিয়মে জাতীয়করণ হওয়া কলেজশিক্ষকেরা যেভাবে আত্তীকৃত (সরকারি) হয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়ে আসছেন, বিষয়টি সেভাবেই রাখা। দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো, জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের নন-ক্যাডার হিসেবে নিজ নিজ কলেজে রেখেই বদলি ও পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা। তৃতীয় বিকল্প হলো, প্রচলিত নিয়ম ঠিক রেখে পদোন্নতিসহ চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে চাকরির সময়কাল সংশোধন করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, শিক্ষকদের অবস্থান কী হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিভিন্ন বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে, যাতে সবার সম্মান ও মর্যাদা ঠিক থাকে এবং সেটা যেন সবার জন্যই ভালো হয়। কলেজগুলো জাতীয়করণের কাজও গুছিয়ে এনেছেন বলে জানান সচিব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, খুব তাড়াতাড়ি ওই সব কলেজ জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারির জন্য কাজ করছেন তাঁরা।
দেশের যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই, সেগুলোতে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করছে সরকার। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে মোট ২৮৫টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য ঠিক করা হলেও দুটি উপজেলায় একাধিক সরকারি কলেজ হয়ে যাওয়ায় সেই দুটি স্থগিত করা হয়েছে। এখন ২৮৩টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাতীয়করণের অংশ হিসেবে ওই সব কলেজের সব সম্পত্তি ইতিমধ্যে সরকারের নামে দান (ডিড অব গিফট) করা হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কাজ করে প্রতিটি কলেজের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনুমোদনের জন্য আলাদা সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় থাকা এসব কলেজের শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। নিয়মানুযায়ী কলেজের সঙ্গে এসব কলেজের এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদান পাওয়া) শিক্ষকেরাও সরকারি হবেন। কিন্তু এই শিক্ষকদের অবস্থান ও মর্যাদা কী হবে সে বিষয়ে নতুন বিধিমালা না হওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষা ক্যাডারের অন্তত ১০ শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে হয়। অন্যদিকে বেসরকারি কলেজগুলোতে যেনতেনভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। এখন শুধু জাতীয়করণ হওয়ার সুবাদে বিসিএস পরীক্ষা ছাড়াই যদি ওই সব শিক্ষক সরাসরি ক্যাডারভুক্ত হয়ে সব সুযোগ-সুবিধা পান তাহলে মেধাবীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হবে। আগে দু-একটি করে কলেজ জাতীয়করণ হতো। ওই সব কলেজের শিক্ষকও ছিলেন কম। কিন্তু একসঙ্গে ২৮৩টি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষককে ক্যাডারভুক্ত করা হলে সেটা পুরো শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে।
জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব শাহেদুল খবীর বলেন, তাঁরা জাতীয়করণের বিপক্ষে নন। কিন্তু ওই সব কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তি তাঁরা মানবেন না। তাঁদের ‘নন-ক্যাডার’ করতে হবে।
অন্যদিকে জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকেরাও আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের দাবি জাতীয়করণ হওয়া কলেজের সব শিক্ষককে শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা, কলেজ জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে চাকরি নিয়মিতকরণ, চাকরিতে যোগদানের দিন থেকে অভিজ্ঞতা গণনা করে চাকরিকাল নির্ধারণ ও ২০০০ সালে করা বিধিমালা অধিকতর সংশোধন করে শিক্ষকবান্ধব করা।
সরকারীকরণ হতে যাওয়া কলেজ শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, যেহেতু সরকারই কলেজগুলো জাতীয়করণ করছে, তাই তাদেরও আগের মতো ক্যাডারভুক্ত করে আত্তীকৃত করতে হবে।