বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
উজ্জ্বল ইতিহাস ‘ওয়ার সিমেট্রি’ দেখে আসতে পারেন
প্রকাশ: ০৪:৪৪ pm ২৪-১২-২০১৭ হালনাগাদ: ০৫:০৯ pm ২৪-১২-২০১৭
 
 
 


কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের কোল ঘেঁষে রয়েছে এক উজ্জ্বল ইতিহাস ‘ওয়ার সিমেট্রি’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হওয়া ৭৩৭ সৈনিকের সমাধিস্থল। কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে এটাকে ইংরেজ কবরস্থান বলা হয়।

শহুরে যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চাইলে চলে আসতে পারেন ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের কোল ঘেঁষে ‘ওয়ার সিমেট্রি’-তে। ময়নামতি সেনানিবাসের সামনে থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে কিছুটা উত্তরের দিকে ওয়ার সিমেট্রি। মূল সড়কের পাশে উঁচু-নিচু টিলাসদৃশ ১৫ একর জায়গা নিয়ে সাজানো-গোছানো এক অপূর্ব স্থান। অপরূপ সুন্দর, তবে এর রয়েছে বিষাদময় ইতিহাসের কথা।

‘ওয়ার সিমেট্রি’ ইতিহাস

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলমান বিভীষিকাময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার স্মৃতিচিহ্ন এই স্থান। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বলি হওয়া ৭৩৭ মানবপুত্র। নিজ বাড়ি ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দূরে এখানেই যাঁদের শেষ ঠিকানা। ৭৩৭ জনের সবাই নিজের দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা বীর। এর মধ্যে ব্রিটেনের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, ভারতীয় উপমহাদেশের ১৭৮, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, রোডেশিয়ার ৩, পোল্যান্ডের ১, বেলজিয়ামের একজনসহ রয়েছে ২৪ জাপানির (যুদ্ধবন্দি) সমাধি।

মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে ফটকের দেয়ালে বাংলা ও ইংরেজিতে লিপিবদ্ধ ইতিহাসসংবলিত পিতলের ফলক। তার প্রশস্ত হাঁটার পথ, যার দুই ধারেই সবুজ ঘাসের মধ্যে সৈনিকদের সারি সারি সমাধি। প্রতিটি সমাধিকে ঘিরে রেখেছে নানা জাতের নানা রঙের ফুলের গাছ। এ গাছগুলোয় ফুল ফোটে সমাধির প্রতিটি নিহত সৈনিকের জন্য। ফুলের ছায়ায় চিরকালের নিদ্রা আর ভাঙবে না তাঁদের। তাঁরা কমনওয়েলথভুক্ত সেনা ও বিমানবাহিনীর জীবন উৎসর্গ করা সদস্য। প্রতিটি সমাধির শিয়রের প্রস্তরফলক বা এফিটাফ (ব্রঞ্জের পাতের ওপরে খোদাই করা) রয়েছে সেখানে সমাহিত সৈনিকের নাম, পদবি, রেজিমেন্ট, বয়স, মৃত্যুর তারিখ এবং ধর্মীয় প্রতীক। 

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন ‘কমনওয়েলথ গ্রেইভস কমিশনের’ তত্ত্বাবধানে সমাধিস্থলটি পরিচালিত হয়। পেছনের অংশে রয়েছে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেনাদের সমাধি। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে রয়েছে জাপানের (শত্রুপক্ষ) ২৪ জন সৈনিক ও বেসামরিকের সমাধি।

‘ওয়ার সিমেট্রি’র সময়সূচি

খুব সুন্দর করে সাজানো-গোছানো থাকে সমাধিস্থলটি। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে। এ ছাড়া ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জন্য তিন দিন করে বন্ধ থাকে এই সমাধিস্থল। মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশের আগেই কিছু নির্দেশাবলির দিকে চোখ যাবে সবার। যেমন : বসে গল্প করবেন না, গেট বন্ধ থাকলে খোলার জন্য অনুরোধ করা যাবে না, যাঁরা শায়িত আছেন তাঁদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, নোংরা করবেন না, ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তবে এখানে সমাধিস্থল পরিচালনার কোনো অফিস নেই বলে ইচ্ছা থাকলেও এর কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।

সবুজে ঘেরা নানা প্রজাতির ফুলগাছ বেষ্টিত এই স্থান তার মোহনীয় সৌন্দর্য দ্বারা মনকে যেমন আনন্দিত করে, তেমনি দিয়ে যায় এক অজানা বিষণ্ণতার পরশ। নিবিড় এই পরিবেশে এসে আমাদের মতো যে কেউ নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিতে পারবে অসাধারণ বেশ কয়েকটি মুহূর্ত। ইতিহাসের নিদর্শনের সঙ্গে বিনম্র ভালোবাসা সংগ্রহ করে নিয়ে ওই দিনের মতো চলে আসতে পারেন আপনি।

‘ওয়ার সিমেট্রি’তে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী যেকোনো বাসে উঠে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে নেমে পড়তে হবে। সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লাগামী বেশ কিছু বাস আসে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। সেখান থেকে উত্তরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ১০ মিনিটের হাঁটার পথ। তবে চাইলে রিকশা বা অটোরিকশায়ও যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। এখানে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। আবাসিক হোটেলের জন্য আপনাকে কুমিল্লা শহরে যেতে হবে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT