২৫তম আন্তর্জাতিক এবং ১৮তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস আজ। আন্তর্জাতিক এ দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘এ্যাচিভিং সেভেনটিন গোলস ফর দ্য ফিউচার উই ওয়ান্ট’ অর্থাৎ ‘টেকসই ‘ভবিষ্যত গড়ি, ১৭ লক্ষ্য অর্জন করি।’
এ প্রতিপাদ্য যেমন এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে, তেমনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব নির্মাণে ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে। উন্নয়নের মূল ধারায় প্রতিবন্ধীদের একীভূতকরণ এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করি, এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের এটাই হোক অঙ্গীকার।’ তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সমাজের বিত্তবান ও স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সস্পৃক্ত হলে তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে।
বিশ্বকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করতে টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।’ এ লক্ষ্য অর্জনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে তিনি আন্তরিক প্রয়াস চালানোরও আহ্বান জানান। কারণ এগুলোর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
রাষ্ট্রপতি বাণীতে উল্লেখ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি টেকসই উন্নয়নে নির্ধারিত ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পেছনে ফেলে নয়, তাদের সাথে নিয়েই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।’ এক্ষেত্রে তিনি সমাজের সচেতন মানুষ, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দেশের সম্পদে পরিণত করতে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, যেকোন অর্থপূর্ণ কার্যক্রমে তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যকে সম্পৃক্ত করার এই প্রক্রিয়া আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।’
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
এ ছাড়া মিরপুর-১৪ নম্বরে আজ থেকে ৭ দিনব্যাপী ‘প্রতিবন্ধী উন্নয়ন মেলা’র আয়োজন করা হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করবেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। মেলায় প্রতিবন্ধীদের তৈরি নানা পণ্যসামগ্রী থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা হিসেবে না ভেবে নানা কর্মমুখী কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের যে সাবলম্বী করে গড়ে তুলছে, তার প্রতিফলন দেখা যাবে এ মেলায়।
সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর সম্প্রতি সারাদেশে জরিপ চালিয়ে ১৫ লাখেরও অধিক বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী মানুষ শনাক্ত করেছে। তাদের জন্য একটি শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরি করছে। তাদের প্রত্যেককে বর্তমানে সাময়িক পরিচয়পত্র দেয়ার কাজ অধিদপ্তর করছে। আগামী বছরের (২০১৭) ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সবাইকে স্মার্ট কার্ড দেয়া পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।