আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদের মধ্যে সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থ ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট ব্যয়ের অর্ধেকই হয়েছে শেষ তিন মাসে। এর আগে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৮৬ শতাংশ। ২০০৯-১০ থেকে প্রতি অর্থবছরই এডিপি ৯০ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবারই এডিপি বাস্তবায়ন ৯০ শতাংশের নিচে নেমেছে। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ব্যয় করেছে ১ লাখ ২০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় হয়েছে ৭২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৭৮ শতাংশ। নিজস্ব অর্থায়ন : গত অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মূল এডিপির সঙ্গে এ বরাদ্দ যোগ করলে এডিপির আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছর নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১০ শতাংশ। আইএমইডি বলছে, নিজস্ব অর্থায়নের অর্থায়ন হিসাবে আনলে গত অর্থবছরে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। এ হিসেবে বাস্তবায়ন হার দাঁড়ায় ৮৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শুরুতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারিতে এডিপি সংশোধন (আরএডিপি) করা হলেও বরাদ্দ কমানো হয়নি। তবে বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ কমানো হলেও সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে এডিপির আকার একই রাখা হয়। আরএডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়। এ ছাড়া বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আরএডিপি অনুমোদনের পরও বৈদেশিক সহায়তা খাতে আরও ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এতে বৈদেশিক সহায়তা খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। নতুন ৩৮৪টি প্রকল্পসহ সংশোধিত এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ২৮৪টি। শেষের দিকে অর্থ ব্যয় : আইএএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে অর্থাত্ মার্চ পর্যন্ত মোট অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ৫৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে মে থেকে জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। শুধু জুনেই ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি অর্থবছরই দেখা যায় প্রথম দিকে এডিপিতে অর্থ ব্যয় হয় না। আর শেষের অর্ধেকের বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এতে কাজের গুণগত মান ও অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এডিপি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার কারণে মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুেকন্দ্র এমনকি পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও বিদেশিরা চলে গিয়েছিল। এ কারণে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বড় প্রকেল্পও সময় অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করা যায়নি। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ৬ মন্ত্রণালয়-বিভাগ : আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলোচ্য অর্থবছরে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৬টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ। এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ১১৯ শতাংশ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১০৭ কোটি টাকা, বিদ্যুত্ বিভাগ ১০২ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ৯৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের, মাত্র ৩৯ শতাংশ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৫৩ শতাংশ, সেতু বিভাগ ৫৬ শতাংশ, শ্রম ও কর্মসংস্থান ৬৩ শতাংশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ৬৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।