দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও। জিম্বাবুয়ে ছাড়া অন্য কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে আফগানদের সিরিজ জয় এটিই প্রথম।
দেরাদুনে মঙ্গলবার মাঝপথে পথ হারানো বাংলাদেশের ইনিংস থমকে যায় ১৩৪ রানে। আফগানরা জিতেছে ৭ বল বাকি রেখে।
৭ বল বাকি রেখে ৬ উইকেটের জয় শুনলে যেমনটি মনে হয়, ততটা সহজ ছিল না আফগানিস্তানের জয়। প্রথম ম্যাচের উইকেটেই খেলা হয়েছে, এদিন ছিল আরও মন্থর। বল এসেছে থেমে। বোলারদের সৌজন্যে ম্যাচে ভালো মতোই ছিল বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২০।
উত্তেজনাপূর্ণ সেই সময়েই আরও একবার খেই হারিয়ে ফেলেন অভিজ্ঞ রুবেল হোসেন। তার ৫ বলের মধ্যে দুটি করে চার ও ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দেন নবি।
ওই ওভারের আগ পর্যন্ত বোলিং ছিল যথেষ্টই ভালো। নাজমুল ইসলাম অপুর প্রথম ওভার থেকেই বাংলাদেশ ইঙ্গিত দিয়েছিল লড়াইয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারটি নাজমুল নিয়েছিলেন মেডেন। হতে পারত উইকেট মেডেন, যদি না মোহাম্মদ শাহজাদের ক্যাচ ছাড়তেন মুশফিক।
অপুর নিজের পরের ওভারটিও নেন মেডেন। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম ইনিংসে দুটি মেডেন নিলেন বাংলাদেশের কেউ। তবে অন্য পাশের বোলিং হয়নি ততটা ভালো। সেটিকে কাজে লাগিয়ে রান বাড়ান শাহজাদ।
ব্যাটিংয়ের ত্রাতা আবু হায়দার এখানেও উদ্ধার করেন দলকে। ফেরান ১৮ বলে ২৪ রান করা শাহজাদকে।
এরপরই বোলিং হয়ে ওঠে আরও নিয়ন্ত্রিত। উইকেট খুব বেশি আসেনি, তবে আটকে রাখা গিয়েছিল রান।
রানের জন্য ছটফট করেই রুবেলের শর্ট বলে আউট হন ৩১ বলে ২১ রান করা উসমান গনি।
আগের দিন শেষ দিকে ঝড় তোলা সামিউল্লাহ শেনওয়ারি এদিন নেমেছিলেন তিনে। রান করতে ধুঁকছিলেন তিনিও। কিন্তু ভালো বোলিংয়ের ফাঁকেই হুটহাট দু-একটি শর্ট বলে তার কাজ একটু সহজ করে দেন বোলাররা।
শেনওয়ারির কৃতিত্ব, তাড়াহুড়ো না করে অপেক্ষা করে গেছেন বাজে বলের। যেটি পেয়েছেন, কাজে লাগিয়েছেন। ৩ ছক্কা ও ২ চারে করেছেন ৪১ বলে ৪৯।
বোলাররা অবশ্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। আসগর স্টানিকজাইকে ফেরানোর পর শেষ দিকে শেনওয়ারিকেও ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু নবির কাছে রুবেলের হার শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ম্যাচ শেষের ভাগ্য। সাকিবের ভালো বোলিং করতে না পারাও এদিন ভুগিয়েছে দলকে।
শেষটুকু বাদ দিলে ম্যাচে বাংলাদেশের মূল আক্ষেপ অবশ্যই ব্যাটিং। বাংলাদেশের ইনিংসটাকে আলাদা করা যায় তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপের ১০ ওভার ছিল দারুণ।
লিটন দাস যদিও আউট হয়ে ফিরেছিলেন দ্রুত, তামিম ইকবাল মন দিয়েছিলেন লম্বা ইনিংস খেলায়। আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার আউট হয়েছিলেন প্রথম বলেই, এদিন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথমবার প্রথম বলে নেননি স্ট্রাইক।
চতুর্থ ওভারে শাপুর জাদরানের ওভার থেকে আসে চারটি চার। যার তিনটিই টানা তিন বলে মেরেছিলেন সাব্বির রহমান।
পরের ওভারেই মোহাম্মদ নবিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন সাব্বির। তবে দলকে এগিয়ে নেন তামিম ও মুশফিক। উইকেট বুঝে দারুণ খেলছিলেন দুজনই। জমে ওঠা এই জুটি ভাঙে মুশফিক উইকেট বিলিয়ে আসায়। ১৮ বলে ২২ রান করে নবির বলে হন স্টাম্পড।
১০ ওভারে তবু রান ছিল ৮১। ১৫০-১৬০ স্কোর গড়া ছিল খুবই সম্ভব। মাহমুদউল্লাহ গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কায় বল ফেলেন গ্যালারিতে।
বিপর্যয়ের শুরুটাও তার বিদায় দিয়েই। করিম জানাতের বলে বাজে এক শটে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। চাপে পড়ে যায় দল। ইনিংস হারায় গতি। প্রায় থমকে যায় রান।
একাদশ ওভারে আক্রমণে আসা রশিদের বলে নাভিশ্বাস উঠে যায় ব্যাটসম্যানদের।
রশিদকে সামলাতে দুই বাঁহাতি সাকিব ও সৌম্যকে ছয়-সাত নম্বরে রেখেছিল বাংলাদেশ। দুজনই আউট হন রশিদের বলে। এক প্রান্ত আগলে রাখা তামিমও করতে পারছিলেন না ঠিকঠাক টাইমিং। হাঁসফাঁস করতে করতেই শেষ পর্যন্ত রশিদকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৪৩ রানে।
১১ থেকে ১৮, এই ৮ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে রান ওঠে মাত্র ২৭।
এরপর ইনিংসের তৃতীয় ধাপ। আবু হায়দারের দুর্দান্ত কয়েকটি শট। শেষ ২ ওভারে আসে ২৬ রান। ২ ছক্কা, ১ চারে আবু হায়দার ১২ বলে অপরাজিত ২১।
তাতে লড়ার মতো রান এলো। লড়াইও হলো। কিন্তু জয় ধরা দিল না। বরং ইতিহাস গড়ার আনন্দে ভাসল আফগানিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (লিটন ১, তামিম ৪৩, সাব্বির ১৩, মুশফিক ২২, মাহমুদউল্লাহ ১৪, সাকিব ৩, সৌম্য ৩, মোসাদ্দেক ০, আবু হায়দার ২১*, নাজমুল ৬*; মুজিব ০/১৫, শাপুর ১/৪২, নবি ২/১৯, করিম ১/৪০, রশিদ ৪/১২)
আফগানিস্তান: ১৮.৫ ওভারে ১৩৫/৪ (শাহজাদ ২৪, গনি ২১, শেনওয়রি ৪৯, স্টানিকজাই ৪, নবি ৩১*, শফিকউল্লাহ ০*; নাজমুল অপু ০/১৪, সাকিব ০/৩৭, রুবেল ১/৩৮, আবু হায়দার ১/১৪, মাহমুদউল্লাহ ০/৯, মোসাদ্দেক ২/২১)।
ফল: আফগানিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রশিদ খান