ভারত সরকার দেশটিতে যে চল্লিশ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে তাদেরকে 'নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট হুমকি' হিসেবে দেখছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা পেশ করেছে। ওই হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগসাজশ রয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকির। এতে আরো বলা হয়েছে, ভারত এবং মিয়ানমারের মধ্যে অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গারা ভারতে এসেছেন। এ দেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজারের কিছু বেশি। তাদের এখানে বসবাস করার বিষয়টির সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা প্রশ্নটি ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত।" ১৭ পাতার হলফনামায় বিস্তারিত ভাবে এই রোহিঙ্গা-জঙ্গি সংযোগের কথা বলা হয়েছে। হলফনামার দাবি, "বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিকদের ওপর মৌলবাদী রোহিঙ্গাদের হামলার আশঙ্কা রয়েছে।" এদিকে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেওয়ার দিনই শউমান হক নামে একজন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের দাবি, এই ব্যক্তি লস্করের হয়ে কাজ করে। মিজোরাম ও মণিপুরে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি ছাড়া রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার পিছনেও তার হাত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দিল্লি পুলিশের এই গ্রেফতার এবং পরবর্তী সময়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের অবস্থান আরও শক্ত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক ভাবে নয়াদিল্লি যথেষ্ট চাপে রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও এ বিষয়ে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর কড়া নজর রাখছে। ২৫ অাগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর জঙ্গি হামলা প্রেক্ষিতে রাখাইন রাজ্যের মুসলিমদের উপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। সহিংসতার জেরে রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য পালিয়ে যাচ্ছে। এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি নয়। ঢাকাও চাপ তৈরি করছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারত যেন পাশে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে বলেছেন, "একটা সম্প্রদায়ের সবাই জঙ্গি, এটা বিশ্বাস করি না। জঙ্গি থাকলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ করুক। বাকিদের সমস্যা মানবিক ভাবেই দেখা উচিত।" তিনি আরো বলেন, "রোহিঙ্গা শিশুদের তালিকা বানিয়ে কেন্দ্র তাদের ফেরত পাঠাতে বলেছে। কিন্তু আমাদের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন এ কাজে পারদর্শী নয়।" কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আইএসআই এবং লস্করের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানাতেও বহু রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার