আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছুটিতে যেতে চান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এই ছুটি কি শুধু দল থেকে, নাকি সরকার ও দল—উভয় থেকে, তা খোলাসা করেননি তিনি। গতকাল শনিবার সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে দলের নেতাদের এই আগ্রহের কথা জানান তিনি। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা পরে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ধানমন্ডির কার্যালয়টি আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী সুইজারল্যান্ডে যাবেন। এই ফাঁকে গতকাল হঠাৎ করেই ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান তিনি। গত অক্টোবরে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর এবারই প্রথম যাওয়া সেখানে। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে বরণ করেন। এরপর সেখানে থাকা নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বক্তৃতা করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ওই কার্যালয়ের পাশেই আরেকটি কার্যালয় নেওয়া হয়েছে। ওই কার্যালয়টিও পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেখানেই তিনি ছুটি চান।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তাঁর বয়স হয়েছে। ঘন ঘন বিদেশে যেতে হয়। কোনো ছুটির দিন নেই। প্রচুর ফাইল সই করতে হয়। দলও চালাতে হয়। এখন নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার সময় হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে। সবকিছু প্রবীণদের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। দল এখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এগিয়ে নিতে চান। এরপর দলের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হবে।
এ সময় দলের অন্য নেতারা না, না বলে আওয়াজ তোলেন। একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলে ওঠেন, ‘নেত্রী, আপনাকে আমরা ছাড়ব না। আপনি ইঞ্জিন আর আমরা বগি। বগি কমতে পারে, বাড়তে পারে। আপনি হচ্ছেন আমাদের মূল শক্তি। ইঞ্জিন ছাড়া বগি যতই লাগান, বগি চলবে না।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো অনেক দূর নিয়ে গিয়েছি। আমি আর পারব না। আমার বয়স হয়েছে। আমি তো ডিজিটাল লিডারশিপ তৈরি করলাম। আমি অ্যানালগ চালালাম। তোমরা ডিজিটাল চালিয়ে নাও।’
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির এবং এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলেন, দুই নেত্রী একসঙ্গে বসলেই সব সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর ছেলে মারা যাওয়ার পর দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের লোকজন কথা বলে নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও অপমান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। হাসপাতালে বিএনপির ডাক্তাররা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়নি। এরপরও জাতীয় স্বার্থে তিনি বিএনপির নেত্রীকে ২০১৩ সালে ফোন করেছিলেন। আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাড়া দেননি। এখন তাঁর সঙ্গে কিসের সংলাপ? আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া না-নেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তাঁর নয়। বিএনপি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে আসবে। তারা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে আসবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়ে শেখ হাসিনা দলের নেতাদের বলেন, আইন তৈরি করতে সময় লাগবে। সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন আইন করার কথা বলছে না। আবার আইন করলে বলবে মানি না।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর একটা প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস নেই—এমন কোনো দল যাতে রাজনীতি না করতে পারে, সেই বিষয়টি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ
এর আগে দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা তিন বছর পূর্ণ করে চার বছরে পা দিয়েছি। একটানা আট বছর। কাজেই এখনকার পথ হবে আরও কঠিন পথ। আমাদের যে কাজগুলো আছে, সেগুলো শেষ করতে হবে; যাতে আমাদের দেশের মানুষ ভালো থাকে।’
আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় ইশতেহার তৈরির লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক আলাদা সেল গঠন করতে উপদেষ্টামণ্ডলীকে নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন। আগামী ইশতেহার ঠিক করা হবে। সেগুলো এখনই চিন্তাভাবনা হচ্ছে।