আজ বিজয়া দশমী, দুর্গোৎসবের শেষ দিন। বাঙালি হিন্দুসমাজের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের এই শুভক্ষণে আমরা সবাইকে জানাই শারদীয় শুভেচ্ছা। পুরাণ অনুসারে, দুর্গা যেমন অসুরবিনাশী দেবী, তেমনি তিনি দুর্গতিনাশিনী, যিনি জীবের দুর্গতি নাশ করেন। তিনি এবার এসেছেন নৌকায় করে। দেবী দুর্গা অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই জয়ের মধ্য দিয়ে অন্যায় ও অশুভর বিরুদ্ধে ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হয়েছিল।
কেবল বাংলাদেশ বা ভারতের নয়, সারা পৃথিবীর বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবকে তাঁদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মনে করেন। তবে দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও সব ধর্মের মানুষ এর আনন্দ ভাগ করে নেয়। শত শত বছর ধরে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান যেমন পাশাপাশি বসবাস করে আসছে, তেমনি তারা একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিয়ে সেই সামাজিক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করেছে। এটাই বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য। সব ধর্মের মানুষের এতে শরিক হওয়ায় দুর্গোৎসব সর্বজনীন রূপ নিয়েছে।
একসময় কেবল বনেদি জমিদারবাড়িতেই পূজার আয়োজন করা হলেও কালক্রমে দুর্গাপূজা সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। বাঙালি সংস্কৃতি যে অন্তর্নিহিতভাবে সর্বপ্রাণবাদী, নারী তথা মাতৃচরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে, দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে তা ফুটে ওঠে। এই গুণাবলি যতটা ধর্মীয় বিশ্বাস, ততটাই সংস্কৃতির প্রাণরসে ঋদ্ধ। তাই ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বাঙালি সংস্কৃতিরও অন্যতম উৎসবও এটি।
বিগত বছরগুলোতে যে ধরনের জঙ্গি হামলার পর শঙ্কা ছিল, এবার তেমনটি ছিল না। তারপরও নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, পূজার্থীরা হৃষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছেন। আশা থাকবে, ভবিষ্যতে কোনো রকম বিধিনিষেধ ছাড়াই এ দেশের সব ধর্মের ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ উৎসব উদ্যাপন করবে। উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আরও শক্তিশালী হবে।