জাতীয় দিবস ‘সূর্যের দিন’ পালনের একদিন পর পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
শনিবার উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের ১০৫ জন্মবার্ষিকী পালন করে, দিনটিকে ‘সূর্যের দিন’ বলে অভিহিত করে রাষ্ট্রটি। প্রায় বছরই এই দিবসটি উপলক্ষ্যে নতুন কোনো অস্ত্রের পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ অথবা উৎক্ষেপণ ঘটায় রাষ্ট্রটি।
সেই ধারা অনুযায়ী রোববার একটি ‘ব্যালিস্টিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছিল দেশটি, কিন্তু সেটি উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, খবর বিবিসির।
‘সূর্যের দিন’ উপলক্ষ্যে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে সামরিক প্যারেডের মাধ্যমে নিজের শক্তি প্রদর্শন করে দেশটি। এই প্যারেডে দীর্ঘ পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেখতে এবং সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য নতুন একটি অস্ত্র প্রদর্শন করে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি।
রোববার এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “উত্তর কোরিয়া (তাদের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর) সিনপো থেকে শনাক্ত করা যায়নি এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে।”
তারা ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।
এর কিছুক্ষণ পরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড উত্তর কোরিয়ার উৎক্ষেপণের পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে বলে নিশ্চিত করে। তারা জানায়, উত্তর কোরিয়ার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের চেষ্টা করেছিল বলে তারা বিশ্বাস করে এবং তারা সেটি শনাক্ত করে অনুসরণও করেছিল।
“ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরিত হয়ে গেছে,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কমান্ডার ডেভ বেনহ্যাম, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্ভবত আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র না, তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশটি এ পর্যন্ত পাঁচটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ এবং ধারাবাহিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা করে এসেছে।
উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে ঘিরে কোরীয় উপদ্বীপ ও সংলগ্ন অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশটি কোনো নতুন অস্ত্র পরীক্ষার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই উদ্দেশ্যে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে বিমানবাহী রণতরী সমৃদ্ধ একটি নৌবহরও পাঠিয়েছে দেশটি।
উত্তর কোরিয়া তাদের ‘সীমা অতিক্রম করে গেছে’ মন্তব্য করে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জাপান।
উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য ওই ‘আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সম্ভাবনায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল, এ পরিস্থিতে ‘যে কোনো সময় সংঘাত বেঁধে যেতে পারে’ বলে সতর্ক করেছে চীন।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে তার ‘সামরিক হিস্টিরিয়ার’ সমাপ্তি টানতে বলে উত্তর কোরিয়া, নইলে চরম প্রত্যাঘাতের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দেয়।
দেশটির সর্বশেষ এই পরীক্ষাকে সামনে রেখে তৈরি হওয়ার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে গিয়েছেন। সেখানে ১০ দিন অবস্থান করে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচীর মোকাবিলার সেরা পন্থা কোনটি তাই নিয়ে দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।