উন্নয়নের নামে খাল-বিল, নদী-নালা দখল করে ভরাট বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকৃতি ও পরিবেশকে সংরক্ষণ করে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজ করতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শও দেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পানি দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগই পানি হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পানির সংকট। আর সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দুই বিলিয়নের মতো মানুষ।
এমন বাস্তবতায় বিশ্ব পানি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘পানির জন্য প্রকৃতি’।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই আয়োজনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে সংরক্ষণ করে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। তবে উন্নয়নের নামে পুকুর-খাল-বিল, নদী-নালা দখল করে ভরাট বন্ধ করার তাগিদ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে নির্মাণকাজ বা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, এটা থেকে আমাদের যতদূর সম্ভব বিরত রাখতে হবে। আর যদি করা হয় তো অলটারনেটিভ জলাধার সৃষ্টি করতে হবে। আমরা হাউজিং সোসাইটি করি, আমরা শিল্প-কলকারখানা করি বা শপিংমল করি, যা-ই করি না কেন, দেখা যায় যেখানে বিল ছিল এমনভাবে ভরাট করা হয় যে সেখানে আর কোনো পানিরই অস্তিত্ব থাকে না। এমনকি আগুন লাগলে পানিও পাওয়া যায় না। অথচ গড়ে উঠেছে সব পানির ওপর।
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা বলেই আমাদের নিচের পানির স্তর থেকে পানি তোলা যাবে না। পানি যত আমরা তুলব, ওটা যদি ফাঁকা হয় ভূমিকম্পে আরো বেশি ক্ষতি হবে। সেদিকে মাথায় রেখে আমরা এখন কিন্তু ভূমি উপরস্থ পানি, সেই পানিগুলো আমরা ব্যবহার করছি, করার দিকে আমরা নজর দিচ্ছি।’
তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া ভারতের অভ্যন্তরীণ জটিলতার বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠলেই নিশ্চিতভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
নদীশাসন করতে গিয়ে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জলাভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গতিপথ ও নাব্য পুনরুদ্ধার এবং পরিবেশ সুরক্ষায় নদীর তীরে বাফার জোন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের কিন্তু নিজেদেরও সমস্যা আছে এই পানি নিয়ে। কাবেরী নদী নিয়ে তাদের ঝামেলা, তাদের কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে নদী নিয়ে ঝামেলা, তাদের নিজের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা কিন্তু আছে। তিস্তা ব্যারাজ আমরাই উদ্যোগ নিয়ে করেছিলাম। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, সেটা আমরা চিন্তা করি নাই। এই ব্যাবাজটা করার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত ছিল যে আমরা ভাটির দেশে বসবাস করি। কিন্তু এখন সেই তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সমস্যা। তবে আমি সব সময় মনে করি যে আমাদের ড্রেজিং করে নাব্য বাড়িয়ে বর্ষাকালে যে পানিটা হিমালয় থেকে নেমে আসে, সেটা যতটা বেশি আমরা সংরক্ষণ করতে পারব তত বেশি আমাদের দেশের জন্য উপকার হবে।’
পানির অভাব পূরণে পানির অপচয় রোধে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।