আগামী সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল রাজধানীর সেতুভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মন্ত্রিসভায় রদবদলের আভাস দিয়েছেন। তিনি সৈয়দ আশরাফ উপ-প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এমন কোনো বিষয় নাকচ করে দিলেও একটি সূত্র দাবি করেছে দলীয়ভাবে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে পূর্ণমন্ত্রী আছেন ৩১ জন। প্রতিমন্ত্রী ২৭ জন এবং উপ-মন্ত্রী দুজন। ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৪ জেলায় কোনো মন্ত্রী নেই। মন্ত্রী আছে ২৭ জেলায়। প্রতিমন্ত্রী আছে ১০ জেলায়। একটি জেলায় আছে একজন উপমন্ত্রী। অন্যদিকে আট জেলায় রয়েছে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় চারজন আছে শরিক দল থেকে। তাদের তিনজন পূর্ণ ও একজন প্রতিমন্ত্রী। অনেক সময় দেখা গেছে, জেলাগুলোর উন্নয়নে মন্ত্রিত্বের প্রভাব পড়ে। যেসব জেলায় মন্ত্রী আছে সেখানে উন্নয়নের দৌড় যতটা এগিয়ে যে জেলায় মন্ত্রী নেই সেখানে উন্নয়নের গতি বেশ মন্থর। আবার মন্ত্রীদের আসনগুলোতে উন্নয়ন অনেক বেশি। সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনের হিসাব মাথায় রেখে সব জেলায় জনসন্তুষ্টি ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নির্বাচনের আগেই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ হতে পারে। তবে মন্ত্রিসভায় রদবদল-পদোন্নতি বা বাদ পড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। একটি সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের বিষয়ে চিন্তা করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনকালে সরকারের জটিলতার কথা চিন্তা করে সরকারে উপ-প্রধানমন্ত্রীর একটি পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। যদিও শাসক দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, উপ-প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি গুজব। সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই ভোটে জয়লাভ করতে চায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপি শেষ পর্যন্ত অনড় থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে উপ-প্রধানমন্ত্রীর একটি পদ সৃষ্টি করে, সৈয়দ আশরাফকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্বের স্থান ছেড়ে দিলে নির্বাচনকালে সরকারের প্রধান হতে পারেন সৈয়দ আশরাফ। এমন অবস্থা দাঁড়ালে বিপাকে পড়তে পারে বিএনপি। দেশ ও দেশের বাইরে সৈয়দ আশরাফ অনেকটাই গ্রহণযোগ্য মানুষ। এমন একটি বিষয় নিয়ে সরকার চিন্তা করছে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে। মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়ে গুঞ্জন চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও এ নিয়ে কয়েকবার আভাস দিয়েছেন। তবে সূত্র বলছে, এবার প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় রদবদল করতে পারেন। সূত্র মতে, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা চট্টগ্রামে বর্তমানে একজন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারন হলে চট্টগ্রাম জেলা থেকে আরও একজন প্রতিমন্ত্রী যোগ হতে পারে, না হলে বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি আবার মন্ত্রিসভায় ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হলেও তার পক্ষে অন্য মন্ত্রীদের মতো জেলায় সময় দেওয়া সম্ভব নয়, সে অর্থে বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলায় কোনো মন্ত্রী নেই। সূত্র বলছে, গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি শেখ সেলিম এবার মন্ত্রী হতে পারেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তেমন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নেই। গুজব আছে, বর্তমান প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন, না হলে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তাকে মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় কোনো মন্ত্রী নেই। সূত্র বলছে, এলাকার রাজনীতি ও উন্নয়ন সমন্বয় করতে পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত সাংসদ নুরুল ইসলাম সুজন, না হলে ঠাকুরগাঁও থেকে বারবার নির্বাচিত সাংসদ দবিরুল ইসলামকে মন্ত্রী করা হতে পারে। একটি সূত্র বলছে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে ক্লিন ইমেজের ব্যবসায়ী বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরের মেঝ ছেলে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলকে। তা হলে বাগেরহাট-খুলনার জনপ্রিয় নেতা তালুকদার আবদুল খালেককে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে। বরিশাল জেলা থেকেও একজন মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন। টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দাপুটে কর্ণধার সিদ্দিকী ও খান পরিবার এখন দৃশ্যত আর নেই। দলীয় রাজনীতির এমন অবস্থার মধ্যে টাঙ্গাইলে এখন কোনো মন্ত্রীও নেই। সূত্র বলছে, এবার প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইল জেলা থেকে একজন মন্ত্রী নিতে পারেন। শোনা যাচ্ছে সাবেক মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ভোলা না হলে এলাকায় জনপ্রিয় নেতা বলে পরিচিত একাব্বর হোসেন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। আওয়ামী রাজনীতির জন্মস্থান বলে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোনো মন্ত্রী নেই। শোনা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। বর্তমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জেলা রংপুর। এই জেলায় দলের কোনো মন্ত্রী নেই। একজন প্রতিমন্ত্রী আছেন জাতীয় পার্টির। এই জেলা থেকে একজনকে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে বলে গুজব আছে। এছাড়াও শোনা যাচ্ছে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন সাবেক মন্ত্রী লে. ক. (অব.) ফারুক খান। জয়পুরহাট থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ স্বপন। ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুর রহমান মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন বলে একটি সূত্র দাবি করছে। সূত্র বলছে, সিরাজগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. হাফিজে মিল্লাত, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার, টেকনোক্র্যাট কোটায় সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী সাংসদ নূরজাহান বেগম মুক্তা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন।