ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হেনেছে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০/১০০ কিলোমিটার।
এর আগে ভোর ৫টার দিকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে আঘাত হানে মোরা।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান খান জানান, ‘মোরা’ কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে। কুতুবদিয়া হয়ে এটি চট্টগামের দিকে যাচ্ছে।
তিনি জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সেন্টমার্টিনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেন্টমার্টিনের দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা ঘর বেশি। আধাপাকা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ঘরের চাল উড়ে গেছে। এ ছাড়া বহু গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে এ সময় উপকূলের কোথাও জলোচ্ছ্বাসের খবর পাওয়া যায়নি।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, তীব্র গতির ঝড়ে দ্বীপের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালােউপড়ে বা ভেঙে গেছে। ঝড়ে তার নিজের সেমিপাকা বাড়িটিও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় দ্বীপের প্রায় ৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে এবং তাদের খাবারও দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে শুরু হওয়া ঝড়োহাওয়া ক্রমশ উত্তর দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, বাহারছড়া এবং সর্বশেষ সকালে কক্সবাজার শহর হয়ে আরো উত্তরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চকরিয়া-পেকুয়া উপকূলে ঝড়োহাওয়া বয়ে যাচ্ছিল।
কক্সবাজারের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঝড়ের গতিবেগ ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ঘূর্ণিঝড় মোরা কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে যাচ্ছে। সকাল ৮টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারের কুতুবদিয়া অতিক্রম করে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হয়।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে কক্সবাজার জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও গাছপালার। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার ২ লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে জেলার ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিক্যাল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় থাকা ৪১৪টি ইউনিটের ৬ হাজার ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং রেড ক্রিসেন্টের ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কর্মী। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের নিরাপত্তার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে খাদ্য সরবরাহেরও ব্যবস্থা।