বগুড়ায় মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় কাউন্সিলর রুমকি ও তুফানের স্ত্রী আশাসহ ৬ জনের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। সোমবার (৩১ জুলাই) সকালে আদলতে রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ। বগুড়া অফিস রোববার (৩০ জুলাই) জানায়, শহরের বাদুড়তলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার এক তরুণী ও তার মাকে অমানুষিক নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলায় গ্রেফতারকৃত একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ধর্ষক তুফান সরকারসহ তার দুই সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে বিচারক ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তুফান সরকারকে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাছাড়া গতকাল রাতে পাবনা থেকে ধর্ষক তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন মহিলা কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসানকে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার ডিবি পুলিশ। এদিকে, জেলা প্রশাসন ওই ঘটনায় জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততাসহ নির্যাতিত মা ও মেয়েকে প্রয়োজনীয় আইনগত সহযোগিতার জন্য ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সালামকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসক নুরে আলম সিদ্দিকী গতকাল নির্যাতিত তরুণীর খোঁজ নিতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, তরুণীর লেখাপড়া, চিকিৎসা ও আইনগত সহযোগিতার বিষয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করবে। পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত ধর্ষক তুফান সরকারের সহযোগী আতিক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান। দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনার প্রতিবাদে সুজন ও উদীচীসহ বগুড়ার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহরের সাতমাথায় গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। উল্লেখ্য, চলতি বছর এসএসসি পাস করা ওই তরুণীকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নাম করে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার গত ১৭ জুলাই শহরের চকসূত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকায় তার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর ধর্ষকের স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন অপবাদ দিয়ে গত শুক্রবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার মাকে বাদুড়তলা এলাকায় মহিলা কাউন্সিলর তুফান সরকারের স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া হাসানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার মাকে নির্যাতন করে মা-মেয়ের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া গতকাল বিকেলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ধর্ষক তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু ও রূপমকে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন শেখ হেলাল জানান, বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।