রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে অায়োজিত অালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অাওয়ামী লীগ অায়েজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অামিনুল ইসলাম।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশ স্বাধীন করতে যাদের অবদান নেই, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে তারা দেশের জন্য কিছুই করবে না। বরং লুটপাট করে তারা দেশটাকে অারো ধ্বংস করবে। তাদের অার কোনো দিন ভোট দেবেন না।’
অালোচনা সভায় অাওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, শিল্পমন্ত্রী অামির হোসেন অামু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল অাহমেদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে অালম মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তারা অাবার এ দেশে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এ দেশের জনগণ অার তাদের ভোট দেবে না। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করে। যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খালেদা জিয়া রাজনীতি করছে। খালেদা জিয়া অান্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি ডেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দিয়ে অাগুন জ্বালায়, পেট্রল বোমা মারে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হুকুম দেয় খালেদা জিয়া, অার পরামর্শ করে তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে। যে শতশত কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাঠিয়েছে।’
তিনি বলেন, যারা খুনি, যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা স্বাধীনতা চায়নি, এ দেশে যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিল জিয়া। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল জিয়া। যে জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেজর থেকে জেনারেল বানালেন সেই মোনাফেক জিয়া ও খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীও বানিয়েছিল।
অাওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে যে অানন্দ, উল্লাস অার উদ্দীপনা দেখছি সেটার মধ্যে অাশার অালো দেখতে পারছি। এবার তরুণদের সঙ্গে বৃদ্ধ, যুবকরাও মাঠে নেমে এসেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল বয়ে অানবে।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। এক জেল থেকে বেরিয়ে অন্য জেলে ঢুকেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন করার পরও তিনি থেমে থাকেননি। দেশের মানুষকে স্বাধীনতার অান্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনে এ দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। প্রতিশোধ নিতে এ দেশের নারী পুরুষ ও যুবকরা ট্রেনিং নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু তার সাত মার্চের ভাষণে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই অামাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ঘরে ঘরে গড়ে ওঠে দুর্গ। ভারত এক কোটি শরণার্থীকে অাশ্রয় দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেয়। একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে । ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈনিক অাত্মসমর্পণ করে। এ ছাড়া অান্তর্জাতিক চাপে সারা বিশ্বের সমর্থনে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
‘৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা পথঘাট চিনত না। অামাদের দেশের রাজাকার, অালবদর, অাল শামসরা পথ দেখিয়ে দিয়েছে। মা-বোনকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এ সময় তিনি দেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের অত্যাচার নির্যাতনের বীভৎস্য চিত্র তুলে ধরেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে এ দেশের নারীদের চিকিৎসা করিয়েছেন। তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করেছেন’- বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।