গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
খবর পেয়ে গাজীপুর, জয়দেবপুর, সাভার ইপিজেড, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ শুরু করেন। তাঁরা রাত নয়টা পর্যন্ত আটজনের লাশ উদ্ধার করেন। তবে রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের কারও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সোলায়মান মিয়া (৩০) বলে জানা গেছে। কামরুল ইসলাম নামে আরও একজন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা কারখানার লোকজন ও এলাকাবাসীর সহায়তায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে পাঠান। এর মধ্যে ৩১ জনকে স্থানীয় শরীফ মেডিকেলে ও ১৬ জনকে কোনাবাড়ী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীতে টাম্পাকো ফয়লস লিমিটেড নামে একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৩৮ জন নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।
সরেজমিনে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটির পর কারখানাটি আজ মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। এ জন্য গতকাল থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। দুপুরের পর ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু করা হয়। এতে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বয়লারটির বিস্ফোরণ ঘটলে চারতলা ভবনের নিচতলা ও দোতলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও যন্ত্রাংশ উড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতে কারখানার শ্রমিক ছাড়াও সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লোকজন আহত হন।
কারখানাটির সামনের তৈজসপত্র ব্যবসায়ী মো. আ. রশিদ মিঞা বলেন, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের কয়েকটি কারখানার দরজা-জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। এতে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পরপরই ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এলেও রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের সংযোগ চালু হয়নি বলে নয়াপাড়া বাজারের স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী শাকিল আহমেদ জানান।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াৎ হোসেন ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক রাত ১১টার দিকে বলেন, বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা থাকবেন। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) সহকারী পরিচালক দীলিপ কুমার ঘোষ। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রাত পৌনে ১১টার দিকে কারখানাটির চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন ফারুকী ঘটনাস্থলে আসেন। সেখানে এসে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বয়লারের যন্ত্রাংশ ভালো ছিল বলে দাবি করেন। তিনি নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যকে তাঁর কারখানায় চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন বলে জানান।