চালের বাজারে সঙ্কট কাটছেই না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির কারণে মাঝে মোটা চালের দাম সামান্য কমলেও আবারও বেসামাল হয়ে পড়েছে চালের বাজার। মোটা চালের কেজি আবারও ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর চিকন চালের কেজি ৭০ টাকায় ঠেকেছে। চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে দেশের চালের বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ ভারত ঘোষণা দিয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে চাল রফতানি করবে না। এতে করে দেশের চালের বাজারে সঙ্কট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, অবৈধভাবে চাল মজুদের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান শুরু করেছে। যেসব মজুদদারের গোডাউনে চাল মজুদের প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হবে। কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না চালের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম। গত বছরের পুরো সময় দেশের মানুষকে চড়া দামেই চাল কিনে খেতে হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। মাঝে আমন ধান ওঠার সময় এবং আমদানির কারণে চালের দাম কিছুটা কমলেও আবারও বেড়েছে। এখন একেবারে চাল কল বা খামার পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি-খুচরা সব পর্যায়েই বেড়েছে চালের দাম। মিল পর্যায়ে বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১৫০ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। এভাবে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। কিন্তু চালের দাম কেন বাড়ছে, তার সঠিক কোনো কারণ বলতে পারছে না কেউই। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কলকাঠি নাড়েন চালকল মালিকরা। কারণ কৃষকের ঘর থেকে ধান চলে যাওয়ার পর ফড়িয়াদের মাধ্যমে তা যায় মিল মালিকদের হাতে। বাজারের অধিকাংশ ধান মিল মালিকদের হাতে যাওয়ার পর মিল মালিকরা সেগুলো গুদামজাত করে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে। এতে ধানের দাম বেড়ে যায়। আর ধানের দাম বাড়ানোর পর তারা চালের দামও বাড়ায়। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার পর পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে আসতে যত হাত বদল হয় ততবারই দাম বাড়ে। মূলত এভাবেই চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে নিম্নমানের নাজিরশাইল চালের বস্তা ২৫৫০ টাকার বদলে ২৬৫০ টাকা হয়েছে। আর খুচরা বাজারে ৫৪ টাকার নিম্নমানের নাজিরশাইল ৫৬ টাকা হয়েছে। উন্নতমানের নাজিরশাইল ৬২ টাকার বদলে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খুচরা বাজারে স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০, পারিজা চাল ৫০ থেকে ৫২, উন্নতমানের মিনিকেট ভালো ৬৪ থেকে ৬৬, বিআর আটাশ চাল ৫০ থেকে ৫২ ও বাসমতি চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাত্ রাজধানীর পাইকারি বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি গড়ে চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা।
চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য হল চাল। যখন এই পণ্যের দাম বাড়তেই থাকে তখন ভুগতে হয় দেশের প্রতিটি মানুষকে। বাস্তবতা হচ্ছে, লাগাতারভাবে চালের দাম বাড়ছে। যে হারে চালের দাম বাড়ছে এতে বুঝতে হবে নিশ্চয় এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। এই কারসাজি রোখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সে কাজটি করছে না। ফলে ভুগতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাজারে চালের সঙ্কটের সুযোগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চাল রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এতে চালের বাজারে সঙ্কট আরও বাড়বে। কারণ প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারত কোনো পণ্য রফতানি বন্ধ করে দিলে তার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়ে দেশের বাজারে।
চাল রফতানি করবে না ভারত আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে চাল রফতানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারতীয় কাস্টমস একটি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশকে। বেনাপোল শুল্ক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক আলোক চতুর্বেদীর স্বাক্ষর রয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাস ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি করতে পারবে না। কারণ তাদের দেশের অভ্যন্তরে খাদ্যকেন্দ্রিক জনবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের খাদ্য বিতরণ করতে হচ্ছে। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চাল রফতানি বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশকে পাঠানো ভারতের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। আর ডেপুটি হাইকমিশনার এ মুহূর্তে কক্সবাজারের উখিয়ায় আছেন। ঢাকায় ফেরার পর তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।