ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে নয়, শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার জন্যই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল নিয়েছে জাতীয় পার্টি। এ জন্য আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে তৈরি করেছে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ। এ রোডম্যাপ অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কৌশল হবে একরকম। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে কৌশল হবে অন্যরকম। এখন নির্বাচনী প্রচারণা চলবে একরকম। আবার নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে জাপার নির্বাচনী কর্মকৌশল হবে ভিন্ন। এ সব কিছু মিলিয়ে জাতীয় পার্টি তৈরি করেছে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ রোডম্যাপ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচন করলে ১০০ আসন চাইবে জাতীয় পার্টি। এ থেকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন শরিক দলগুলোকে চারটি আসন দেবে জাপা। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। তবে বর্তমানে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে তখন তারা মহাজোটে থেকে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১০০ আসন ভাগাভাগি করার টার্গেট নিয়ে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সর্বোচ্চ ৭০টি আসনে ছাড় দিতে পারে বলে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা অনুমান করছেন। নাম গোপন রাখার শর্তে জাতীয় পার্টির এক সাংসদ জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে বা না নিলে দলটির নির্বাচনী কৌশল কী হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে সংসদে বসে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকের পর নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় এরশাদ নিজেই তত্ত্বাবধান করছেন। এ ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করছেন পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। ইতোমধ্যে দলের সাংসদদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় আরও বেশি সময় দেওয়ার জন্য বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। সাংসদদের বাইরে দলের শীর্ষ নেতা এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও যার যার এলাকায় যাতায়াত বাড়াতেও বলেছেন তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দল মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন এরশাদ। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করতে চান তিনি। এ জন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছেন। এর অংশ হিসেবে দলের নেতারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, তা জানতে চেয়েছেন এরশাদ। নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থাও জানানোর জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দলের চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারকাজ অব্যাহত রেখেছেন। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানান, তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক রোডম্যাপ নিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা রাখতে গত মঙ্গলবার গুলশানে ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছে জাতীয় পার্টি। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগে দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করতে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি দলের এক সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেছেন, আগামীতে আমরা এককভাবে নির্বাচনে যাব। আর কারও সঙ্গে জোট নয়। তবে কেউ চাইলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারে। এ জন্য আগে পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলেই মানুষ আমাদের দিকে এগিয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের ঘিরে একটি জোটে নির্বাচন করতে হবে। আর বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগকে ঘিরে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী জোট হবে। সেভাবেই জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হচ্ছে। এ সব বিষয় নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এককভাবে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী সময় কাছাকাছি এলে তখন পরিস্থিতির ওপর নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করা হবে। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির জোটের প্রতিনিধি সম্মেলন ডেকেছিলেন আগামী শনিবার। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এই সম্মেলন আপাতত স্থগিত করা হলেও খুব দ্রুতই এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেখানেই জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।