বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু
প্রকাশ: ০৯:১৭ am ১৫-০৫-২০১৮ হালনাগাদ: ০৯:২৫ am ১৫-০৫-২০১৮
 
 
 


টানা ২১ দিনের প্রচার শেষে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৫ মে) সকাল ৮টায় মহানগরীর ভোট কেন্দ্রগুলোয় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ হবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ভোটগ্রহণ শুরুর অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রগুলোর সামনে ভিড় জমতে থাকে ভোটারদের। নারী-পুরুষরা আলাদা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন ভোটকেন্দ্র খোলার। তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের এ সিটির নির্বাচনে দেশের  উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ইস্যুটি চাঙ্গা রয়েছে। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ইস্যুতে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে চায়। আর বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে জয়-পরাজয়ের নির্বাচন আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

খুলনায় সিটিতে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের বছরে এ ভোট এমনিতেই বাড়তি তাৎপর্য বহন করছে। তারওপর দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়াতে খুলনায় বিরাজ করছে ভিন্ন আবহ। সংসদ নির্বাচনের দিকে চোখ রেখে মেয়রের চেয়ার জয়ে লড়াই করা বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য এ নির্বাচন হয়ে উঠেছে প্রেস্টিজ ইস্যু।

বড় দুটি দলের দুই মেয়র পদপ্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তারা দুজনেই বারবার বলে আসছেন, খুলনা মহানগরবাসী তাদের মেয়র নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনি প্রচারের দিনগুলোয় তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনারও কমতি ছিল না। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছিল প্রায় প্রতিদিনই। বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী গত কয়েকদিন পুলিশের বিরুদ্ধে তার কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেফতারের অভিযোগও তুলেছেন।

গত ২৩ এপ্রিল থেকে দিনরাত এক করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কোথায় দেখা মেলেনি তাদের! বাসাবাড়ি, হাট বাজার, দোকানপাট, অলিগলি, রাজপথ, বস্তি থেকে দালানকোটা–সবখানে ছুটেছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণির ভোটারের মন জয়ে তাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা মহানগরীকে মাতিয়ে রেখেছিল গত তিন সপ্তাহ। স্লোগান-মিছিলের শহরে পরিণত হওয়া খুলনা নগরী ছেয়ে গেছে পোস্টার ব্যানারে।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন— আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

এছাড়া, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৫ ও নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি। ভোটকক্ষ এক হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৫৫টি। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ২৩৪টিকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। দুটি কেন্দ্র–মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিটিআই কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছেন চার হাজার ৯৭২ জন। এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক থাকছেন ২১৯ জন। এর মধ্যে ৪/৫ জন বিদেশি, ৩৫ জন নির্বাচন কমিশনের, ১৭৯ জন বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষক।

নগরীতে ১৬ প্লাটুনে ৬৪০ জন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে তারা নগরীতে টহল দেওয়া শুরু করেন। জোরদার টহল রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও সক্রিয় রয়েছেন। আজ ৩২টি টিমে বিজিবি ও ৩১টি টিমে র‌্যাব সদস্যরা টহল দেবেন।

নির্বাচনের দিন ২৮৯ কেন্দ্রে ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ২৫৪টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের প্রতিটিতে আনসার ও পুলিশ মিলিয়ে ১৪ জন এবং বাকি কেন্দ্রগুলোতে ১২ জন করে সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর গঠিত কেসিসিতে এটি ষষ্ঠ নির্বাচন। সবশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির নেতা মনিরুজ্জামান মনি। তার আগে ২০০৮ সালে মেয়র হয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মেয়র পদে লড়তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন আব্দুল খালেক।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া তার দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সবকিছুই এবারের ভোটের হিসেবে আনছেন ভোটাররা।

গত ৩১ মার্চ কেসিসি তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয় ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৫-১৬ এপ্রিল হয় যাচাই-বাছাই। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৩ এপ্রিল। এদিন আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন প্রার্থীরা।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT