জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারবারের এমপি বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মসিউর রহমানকে হারিয়ে চমক দেখালেও গত নির্বাচনে নিজেই ধরাশয়ী হয়েছিলেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের দুই সম্ভাব্য প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ও সফিকুল ইসলাম অপুর পাশাপাশি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মসিউর রহমান আগামী নির্বাচনে বিজয়ের জন্য রীতিমতো মুখিয়ে আছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের লড়াই রীতিমতো জমে উঠেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী চারজন। তারা হলেন-বর্তমান এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু, সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। বিএনপির প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন-জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মীর রবিউল ইসলাম লাবলু। জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ড. হারুন অর রশিদ।
বর্তমান এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তার ব্যক্তিগত সহকারী কামাল হোসেন জানান, তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগ শুরু করেছেন; দলীয় কর্মকান্ডেও সক্রিয় হয়েছেন। গত নির্বাচনের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী মনে করছেন, আগামীতে দলের মনোনয়ন পেলে তিনি খুব সহজেই নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতে পারবেন। গত নির্বাচনে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির প্রতিদ্বন্দ্বী সফিকুল ইসলাম অপুও থেমে নেই। আবারও দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি সৎ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী মসিউর রহমানকে তিনি পরাজিত করেছিলেন। গত নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবারও তার প্রত্যাশা, তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারবারের সাবেক এমপি মসিউর রহমান। তিনি বলেন, চার দফায় এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বর্তমানে জেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় উন্নয়নের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তার সবকিছুই তিনি করেছেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ জানিয়েছেন, সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মসিউর রহমান প্রার্থী হতে না পারলে তিনি এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। এ ব্যাপারে তার কাছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মীর রবিউল ইসলাম লাবলু বলেছেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কাছে পরাজিত হয়ে তিনি জেলা পর্যায়ের রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। তার সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে স্থানীয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়। এখন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা পরিবর্তন চান। আর সেই নেতা-কর্মীদের অনুরোধেই তিনি প্রার্থী হতে চাইছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ড. হারুন অর রশিদ মনে করেন, তার দল একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে তিনি মনোনয়ন পাবেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী। এর পর থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর এ আসন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মওলানা নুরুন্নবী ছামদানি। ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আশরাফুল আবেদীন আশা ও আনোয়ার জাহিদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির প্রার্থী মসিউর রহমান নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মসিউর রহমানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম অপু।