ঢাকার দোহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার ভোরে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভাষ্য, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের জঙ্গি সদস্যরা ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ও দোহার থানা এলাকায় আত্মগোপনে থেকে পুনরায় সংগঠিত হয়ে নাশকতার মাধ্যমে সংগঠনকে চাঙা করার পরিকল্পনা করছিলেন।
গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন দোহার মৌড়া এলাকার আবু বকর বাবুলের দুই ছেলে মিজবাহ (১৯) ও মাহফুজ (১৬)। মিজবাহ নবাবগঞ্জ সোনাহাজরা মাদ্রাসার ছাত্র। মাদ্রাসায় পড়ার ফাঁকে একটি মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর ভাই মাহফুজ জয়পাড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া তাইবুর রহমান (১৮) নারিশা সাকিন এলাকার সোহরাব তালুকদারের ছেলে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র। মিজবাহ ও কথিত বড় ভাইয়ের প্ররোচণায় উগ্র ধর্মীয় ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন।
গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল আহমেদ সানিল (১৯) কেরানীগঞ্জের মো. আবদুস সালাম আহমেদের ছেলে। তিনি ২০১৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে রানাকান্দা ইস্পাহানী কলেজে ভর্তি হন। মিজবাহর কাছ থেকে ধর্মীয় উগ্রবাদের শিক্ষা নেন। গত বছরের শুরুর দিকে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামে তিনি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২০ মার্চ র্যাব রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দুই ইঞ্জিনিয়ারসহ মোট পাঁচ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ওই জঙ্গিদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় বাড্ডা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব-১০ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে একটি দল দোহার মৌড়া এলাকা থেকে মিজবাহ ও তাঁর ভাই মাহফুজকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কক্ষ থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ এবং বিছানার নিচ থেকে মাহফুজের হাতে তৈরি দেশীয় অস্ত্র ডেগার উদ্ধার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মিজবাহর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জেএমবির আরেক সদস্য তাইবুর রহমানকে গতকাল বিকেল চারটায় দোহার নারিশা সাকিন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই তিনজনের দেওয়া তথ্য অনুসারে আজ ভোর ছয়টায় কেরানীগঞ্জ থেকে ফয়সাল আহমেদ সানিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফয়সালের বাড়ি থেকে জঙ্গিবাদী বই উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি ও র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া চারজন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সেলফোন পরীক্ষা করে জেএমবির পলাতক সদস্যদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। চারজনই সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। প্রায় দুই বছর ধরে তাঁরা এক হয়েছেন। দলের সব সদস্যরা ইন্টারনেট পরিচালনা, টেলিগ্রাম আইডি ও ট্রিমা অ্যাপস ব্যবহারে পারদর্শী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকারী বিভিন্ন স্ট্যাটাস ভাইরাল আকারে পোস্ট করে সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের উদ্দেশে প্রচারণা চালাতেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগৃহীত আরবি ভাষায় লেখা বিভিন্ন উগ্রবাদী মতাদর্শ বাংলায় অনুবাদ করে ছড়িয়ে দিতেন।