মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
নতুন বই হাতে আনন্দে মাতলো শিশুরা "বই উৎসবে"
প্রকাশ: ০৩:৩৯ pm ০১-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ০৩:৪৯ pm ০১-০১-২০১৮
 
 
 


নতুন বছরে ক্লাসে বসার ঠিক আগমুহূর্তে রং ছড়ানো বর্ণিল প্রচ্ছদ আর নতুন বইয়ের গন্ধ শিশুদের মনে ছড়িয়ে দিয়েছে অপার আনন্দের আবেশ।

গ্রাম-শহরের প্রতিটি প্রান্তরে শিশুরা নতুন বই নিতে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকে নিজ নিজ স্কুলের আঙিনায়। সকালের সোনারোদে শিশুদের হাসিমুখ যেন বলে দিচ্ছিল, বইয়ের প্রতি, শিক্ষার প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা আর আন্তরিকতার কথাই। নতুন বই হাতে পেয়ে, বুকে জড়িয়ে তার গন্ধ শুঁকে শিশুরা নির্মল হাসিমুখে ছুটে গেছে বাড়িতে।

উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘বই উৎসবের’ এই চিত্রটা ছিল আজ সোমবার সকালের, সারা দেশের। সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বার্ণিল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদিকে রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। 

বার্তা সংস্থা বাসসের পক্ষ থেকে জানা যায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে দেশের ৫০৮টি উপজেলার সব প্রাথমিক স্তরের দুই কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ শিক্ষার্থীকে বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি আমার বই এবং ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া এ বছরই প্রথম পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাদরী) শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালাসংবলিত মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়নের বিষয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩৪ হাজার ৬৪২টি আমার বই, ৩৪ হাজার ৬৪২টি অনুশীলন খাতা এবং প্রথম শ্রেণির ৭৯ হাজার ৯৯২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।

এই পাঠ্যপুস্তক ২৪টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। জেলাগুলো হলো—বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রাজশাহী, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি ও প্রথম শ্রেণির মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি পাঠ্যপুস্তক, পঠন-পাঠনসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফুজ্জামানের সভাপতিত্বে বই বিতরণ উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, উম্মে রাজিয়া কাজল, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে এসব পাঠ্যবই তুলে দেয়। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ ডিসেম্বর এই বই বিতরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

প্রায় ছয় হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ সময় অভিভাবক, শিক্ষকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সুবিধা নেই, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৮ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে এবং দেশের যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাবে না, সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুবিধায় এ ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা লাভের অংশ হিসেবে দক্ষ ও যোগ্যভাবে নিজেদর গড়ে তুলতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা সব শিক্ষা পদ্ধতির মেরুদণ্ড। কাজেই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

‘প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে শুধু সরকারের একক প্রচেষ্টা নয়, দেশের সবাইকে এর উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক এগিয়ে এলে এ দেশের কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ থাকবে না। কোনো শিক্ষার্থী না খেয়ে থাকবে না,’ যোগ করেন মন্ত্রী।

পরে বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে এ বই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বই উৎসব শেষ হয়।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT