শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পুলিশি নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২ অক্টোবর সোমবার নালিতাবাড়ী শহরের তারাগঞ্জ উত্তর বাজারস্থ শহীদ মিনার তিন রাস্তার মোড়ে একাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও ভাংচুর চালিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনতা। শহরে নিহতের মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। ভাংচুর করা হয়েছে সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেলের কার্যালয়। নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানায়, রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়ার সময় তারাগঞ্জ উত্তর বাজারস্থ রহুলের চায়ের দোকানের সামনে একটি রিক্সার সঙ্গে ধাক্কা খান নালিতাবাড়ীতে কর্মরত পুলিশের এএসআই সুমন। এসময় তিনি ক্ষেপে গিয়ে পাশেই দাড়ানো কাচারিপাড়া মহল্লার যুবক বিশ্বদেবকে ধরে তিনি মারধর শুরু করেন এবং পকেট থেকে গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে রাত দশটার দিকে স্থানীয়দের সুপারিশে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বিশ্বদেব অসুস্থ অনুভব করলে রাত একটার দিকে তাকে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনেরা। এসময় কর্তব্যরত চিকিত্সক বিশ্বদেবকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ভোরেই এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং বিশ্বদেবের মরদেহ নিয়ে শহরের উত্তর বাজারস্থ শহীদ মিনার তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের এএসআই সুমনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে একাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ভাংচুর চালায়। ইটপাটকেল মেরে ভাংচুর করা হয় একই স্থানে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেলের কার্যালয়। সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ করে মাইক বেধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কয়েক শতাধিক জনতা। মুহূর্তেই উত্তর বাজারে হাজারো জনতা অংশ নেয় এবং শহরে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল বের করে হরতালের ডাক দেয়। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী দাবী করেছেন, বিশ্বদেব শৈশবে বাবা বিধান সূত্রধরকে হারিয়েছে। বর্তমানে সে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করে বিধবা মা আর ছোট বোনের সংসার চালাচ্ছেন। সদ্য সমাপ্ত দূর্গাপূঁজার ছুটিতে সে বাড়িতে আসে। সে কোন প্রকার নেশার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ তাকে মিথ্যা ফাঁসিয়ে নির্যাতন করেছে বিধায় সে মারা গেছে। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিকে প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের গায়ে আঘাতের কোন চিহ্ন ছিল না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শেরুর হাসপাতল মর্গে পাঠানো হয়েছে। থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফসিহুর রহমান নিহতের স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, প্রায় ৫০-৬০ গ্রাম গাঁজাসহ রোববার সন্ধ্যায় বিশ্বদেবকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। রাত দশটার দিকে স্থানীয়দের সুপারিশের ভিত্তিতে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোন নির্যাতনের ঘটনা থানায় ঘটেনি। আমাদের সিসি টিভি ফুটেজই এর প্রমাণ। অভিযোগকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে।